ওবায়দুল কাদের থাকছেন সাধারণ সম্পাদক, চমক আসছে গুরুত্বপূর্ণ পদেও

প্রকাশিতঃ 9:52 pm | December 02, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সাধারণ সম্পাদক পদ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ইতিহাস গড়েই এবার এই পদে হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে দিন কয়েক আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) দক্ষিণ সুড়ঙ্গের কাজ সমাপ্তির উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরের সাংগঠনিক নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

দলীয় প্রধানের এমন প্রশংসা বাণী থেকেই স্পষ্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের অধিক গ্রহণযোগ্য ও সমকালীন রাজনীতিতে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তায় তাঁর সমকক্ষ রাজনীতিক নেই। ফলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতির পছন্দের শর্ট লিস্টে ওবায়দুল কাদের অগ্রগণ্য এটি দিবালোকের মতোই পরিস্কার। এ বিষয়ে একমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও।

সূত্র মতে, আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ ৫ নেতা নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতার পুরস্কার পেতে পারেন। কেউ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। কেউ কেউ আবার সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ‘ইন’ হতে পারেন। সময় গড়াতেই এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, দীর্ঘ সময় যাবত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিক যোগ্যতায় নিজেদের প্রমাণ করেছেন মাহবুবউল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি। গত কাউন্সিলে দলীয় প্রচার সম্পাদক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞ।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে কারা থাকবেন বা আসবেন এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার সিদ্ধান্তের ওপর শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে দলটির সব নেতা-কর্মীর।

প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে ‘চমক’
সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ডা: দীপু মনি চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও নিষ্ঠার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ। তাঁরই যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপত্য স্নেহে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দেশের শিক্ষা খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার কঠিন মিশন নিয়ে দুর্বার গতিতেই এগোচ্ছেন। দলে ও সরকারে কীভাবে দিন-রাত একাকার করে কাজ করতে হয় সেই সফলতার অনন্য এক উদাহরণও তৈরি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি।

মন্ত্রণালয়, নিজের নির্বাচনী এলাকা সামাল দিয়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে টিম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বৈরিতা ও মানসিক দূরত্ব পরিহার করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহনশীল আচরণের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দল ও দেশের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার বার্তা দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তৃণমূল থেকেই আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর মিশনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন দীপু মনি। এবারের সম্মেলনে ডা: দীপু মনিকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দেখা যেতে পারে।

সূত্র বলছে, দুর্জেয় অনুপ্রেরণার উৎস ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মেধাবী ও বাগ্মী রাজনীতিক ড.হাছান মাহমুদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত। যখন যে মন্ত্রণালয় সামলেছেন সেখানেই তিনি নিজের স্বকীয়তা উদ্ভাবনী ও মেধার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীলতার জন্য হয়েছেন প্রশংসিত। তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করার মিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড.হাছান মাহমুদ। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগের টিম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন সফলতার সঙ্গেই। কাজের মতো কথা বলাতেও রয়েছে তাঁর নিজস্ব স্টাইল। তথ্য-উপাত্তের আলোকে গঠনমূলক ও যুক্তিনির্ভর বক্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে ‘ধবল ধোলাই’ করছেন প্রতিনিয়ত।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময় বা জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষায় সরকার এবং আওয়ামী লীগের কার্যকর পদক্ষেপ সবই উঠে এসেছে দল ও সরকারের অন্যতম এই নীতি নির্ধারকের প্রাঞ্জল বক্তব্যে। দলীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের বহাল থাকলে ড.হাছান মাহমুদকেও দেখা যেতে পারে প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্যের কাতারে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কারা?
একই সূত্র বলছে, তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও ড. হাছান মাহমুদ পদোন্নতি পেলে এই পদ শুন্য হবে। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মুন্সীয়ানার পরিচয় দেওয়া মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন আসন্ন কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাহবুবউল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনিদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমকে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জামালপুর-৩ আসন থেকে টানা ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ‘ভোটের রাজা’ উপাধি পাওয়া এই রাজনীতিক নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। চ্যালেঞ্জিং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে ১ হাজার ৪০২টি ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে রীতিমতো চমক তৈরি করেন এই সাংগঠনিক ‘ম্যাজিক ম্যান’। সাংগঠনিকভাবে হ-য-ব-র-ল ঢাকা বিভাগকে অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করে তুলেছেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা জেলার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ওবায়দুল কাদের।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, মাঠের রাজনীতি থেকে উঠিয়ে আনা মির্জা আজম ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগকে পুরোদমে গুছিয়ে আনতে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। কর্মীবান্ধব ও পরিশ্রমী এই রাজনীতিক বরাবরই সাহসী এবং দলের প্রয়োজনে যেকোনো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে সিদ্ধহস্ত। তিনি এর প্রমাণও রেখে চলেছেন একদিন-প্রতিদিন। এই বছর জানুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে দলীয় সভানেত্রীর দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট নিখুঁতভাবে পালন করে আবারও নিজের দক্ষতাকে মোটা দাগে উদ্ভাসিত করেছেন মির্জা আজম। ফলে এবারের কাউন্সিলে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পেলে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা খুশি হবেন, এমনটি বলা যায় নি:সন্দেহে।

যেভাবে হ্যাটট্রিক সাধারণ সম্পাদকের পথে ওবায়দুল কাদের
গত ২৬ নভেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) দক্ষিণ সুড়ঙ্গের কাজ সমাপ্তির উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁর পাশেই ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নানা প্রেক্ষাপটেই দল ও সরকারে ‘বেস্ট’ ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান।

ওবায়দুল কাদেরকে ‘ডায়নামিক’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে তিনি পার্টির সেক্রেটারি, আবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার কাজের চাপ অনেক কমে গেছে।’ এই বক্তব্যের পর অনেকেই ধারণা করছেন আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে না। তার মানে, ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন দলটির ‘হ্যাটট্রিক’ সাধারণ সম্পাদক। আগেভাগেই দলীয় সভাপতির কাছ থেকেই তিনি ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে গেলেন।

২০১৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। ওই বছর ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। এরপর ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

মাঝে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকলেও বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ ওবায়দুল কাদের। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পাশাপাশি সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দুই পদই সমানতালে সামাল দিচ্ছেন তিনি। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, আগামীবারও দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের।

কালের আলো/এমএএএমকে