সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান
প্রকাশিতঃ 6:42 pm | December 05, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :
দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী দেশের যেকোন দুর্যোগে বড় বন্ধু। জাতির কল্যাণে নিবেদিত সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছে দেশের ভাবমূর্তি। ফলত সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিন বাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যতিক্রম হয়নি সোমবারও (০৫ ডিসেম্বর)। এদিন মিরপুর সেনানিবাসস্থ শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২ এর কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কথা মোটা দাগেই তুলে এনেছেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে এনডিসি কমান্ড্যান্টের শুভেচ্ছা স্মারক উপহার
সরকারপ্রধান আনন্দময় চিত্তে দৃঢ় কন্ঠে উল্লেখ করেছেন ‘যেকোন দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এজন্য দেশে যেমন তারা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে তেমনি বিদেশের শান্তি রক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে।’ সশস্ত্রবাহিনীর অভ্যুদয়ের গোড়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতেও তাদের লক্ষ্যও নির্ধারণ করে দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
ভূমিহীন ৩৫ লক্ষ মানুষকে ঘর দেয়ার কাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবদানের কথাও উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের ভূমিকার কথা আলোকপাত করেছেন। তিনি জনগণ, সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে রচিত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সবসময় মনে রাখতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই আমাদের দেশের মান মর্যাদা সবসময় সমুন্নত রাখা এবং তাদের পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমসহ তিন বাহিনীর উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশবাসীকে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান
অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খেলেও বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনও ধরনের অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কিছু কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে নানাভাবে। অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। সেখানে আমি বলবো যে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছু নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তার ওপরে আবার মড়ার ওপর খাড়ার ঘা এসেছে রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ। যুদ্ধের সঙ্গে এলো স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো বা ধনী দেশগুলোও আজকে আপনারা জানেন যে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এবং তারা হিমশিম খাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায়ও আমি বলতে পারি-বাংলাদেশকে এখনও স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য, যখনই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশটা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, সবার তা হয়তো পছন্দ হয় না, এটাই হলো বাস্তব।’
মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বে লকডাউনে ভ্রমণ ও আমদানি বন্ধ থাকাকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তার সরকার বিনামূল্যে টিকা দিয়েছে, প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।
যুদ্ধের কারণে আমদানি পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে কোনও কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচা করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচা করতে হয়েছে। আমরা করেছি। তারপরও আমাদের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, আমাদের ফসল উৎপাদন হচ্ছে, আমরা সার থেকে শুরু করে সবকিছু কৃষকদের কাছে খুব স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।’

যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে যে যা পারবে তা উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে খাদ্য সংকট, তা যেন বাংলাদেশে না হয়।’
দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের কোনও রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কাটা কিন্তু আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং পড়তে যাচ্ছে, পড়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, বিশ্বটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বটা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাবো।’
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। আমরা নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করবো। নিজের দেশকে নিজে গড়ে তুলবো। এই কথাটা যদি আমরা মাথায় রাখতে পারি, আর এই আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি চলতে পারি-ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নতি করুক। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকে এগিয়ে যাক, সেটাই তার সরকারের লক্ষ্য। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। বাংলাদেশ একটা দেশ, পৃথিবীতে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি যে প্রতিটি দেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এবং সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’
আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়নে এনডিসির প্রশংসা
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনে সফলতার সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২ কোর্সে অংশগ্রহণকারী সকলকে অভিনন্দন জানান। জাতির নিরাপত্তার নিশ্চিতকল্পে এনডিসির পাঠ্যক্রমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রী গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করে কোর্স কার্যক্রম সম্পন্ন করায় তিনি এনডিসির কমান্ড্যান্ট এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি এনডিসিতে বিদেশী কোর্স মেম্বারদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এবং আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়নে এনডিসির ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) গভর্নিং বডির ১৯তম যৌথ সভায় যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিসি ও ডিএসসিএসসির চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এনডিসি কমান্ড্যান্টের কৃতজ্ঞতা
চলতি বছরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন। নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রধান নায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট সফলতার সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য কোর্সে অংশগ্রহণকারী সকল দেশী ও বিদেশী কোর্স সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং কোর্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও ষ্টাফ অফিসারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে এনডিসির জন্ম থেকে এখন অবধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় পৃষ্ঠপোষকতা, দিকনির্দেশনা ও বিশেষ মনোযোগের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আইএসপিআর জানায়, এই বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ৫ জন কমডোর ও ১ জন ক্যাপ্টেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬ জন এয়ার কমডোর, সিভিল সার্ভিসের ১ জন অতিরিক্ত সচিব, ৯ জন যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের ২ জন ডিআইজি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ জন ডিজিসহ বাংলাদেশের সর্বমোট ৫৮ জন প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা চলতি বছরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম ১৭ টি দেশের ৩০ জন বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী এই কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
এই বছরের আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ জন কর্ণেল, ৪০ জন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ২ জন ক্যাপ্টেন ও ৮ জন কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬ জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও ১ জন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে