টাইব্রেকারে মরক্কোর ঐতিহাসিক জয়
প্রকাশিতঃ 11:56 pm | December 06, 2022
স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:
ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করল মরক্কো। এ যেন টিকিটাকা বনাম দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণের লড়াই। তাতে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি কোনও দলই। স্পেনের একের পর এক আক্রমণ মুখ থুবড়ে পড়েছে মরোক্কান ডিফেন্সের সামনে। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানের হয়নি মীমাংসা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই শিষ্যদের এক হাজার করে পেনাল্টি মারতে বলে দিয়েছিলেন এনরিকে। সেই ‘হোমওয়ার্ক’ কিনা কাজে লাগলো না এদিন। টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ আটে মরক্কো। বিদায় ঘণ্টা বাজলো অন্যতম ফেভারিট স্পেনের।
কোস্টারিকাকে সাত গোল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল স্পেন। এরপর আর সেই স্পেনকে পাওয়া যায়নি। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই শেষে ড্র, এরপর জাপানের বিপক্ষে বসল হেরেই। সেই স্পেন আজকের ম্যাচের শুরুতেই ৭০ শতাংশের কাছাকাছি সময় নিয়ে রেখেছিল বলের নিয়ন্ত্রণ। বল দখল মোটে ২০ ভাগের একটু বেশি হলেও মরক্কোর ফুটবলাররা বিভ্রান্ত হননি। যথেষ্ট পরিণত ফুটবলই খেলেছেন দলটি।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘড়ির কাটা যতই এগিয়ে যাচ্ছিল, কোচ লুইস এনরিকে কপালের চিন্তার ভাঁজ তখন ক্রমেই বাড়ছিল। এনরিকে গাভির বদলে মোরাতাকে নামান। ৭০-৭৫ মিনিটের মধ্যে তিন পরিবর্তন করেন। শেষ পনের মিনিট ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যথেষ্ট চেপে ধরেছিল আফ্রিকান দলকে। মরক্কোর দলটি যে সহজে ভেঙে পড়ার নয়, সেটা তখন প্রমাণিত হয়েছে আরও এক বার।
পাঁচ মিনিট ইনজুরি সময় দারুণ ফুটবল হয়েছে। মরক্কো গোলের সুযোগ পেয়েছিল। ফিনিশিং ব্যর্থতায় আর গোলটি হয়নি। ইনজুরি সময় শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে বক্সের একটু বাইরে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেই ফ্রি কিকে স্পেন গোল পেয়েই যাচ্ছিল। বল গোললাইন অতিক্রম করার আগ মুহর্তে মরক্কোকান গোলরক্ষক হাত ছোঁয়ান। শেষ মিনিটে দুইটি কর্নার আদায় করে স্পেন। মরক্কোর ডিফেন্ডারদের দক্ষতায় অবশ্য সফল হয়নি একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
গতকাল ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচের মতো আজকের এই ম্যাচও গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে মরক্কো দারুণ এক আক্রমণ রচনা করে। স্পেন রক্ষণ পরাস্ত হওয়া সেই আক্রমণ অফসাইডে বাতিল হয়। স্পেন অতিরিক্ত সময়েও বল দখল নিজেদের পায়েই রেখেছিল। পুরো ম্যাচে ৮০০ পাস খেলেছে এনরিকের দল, তবে পায়নি কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। ১০৪ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ রচনা করে মরক্কো। ডিফেন্স চেরা পাসে স্পেনের দুই ডিফেন্ডার পরাস্ত। মরক্কোর ফরোয়ার্ডের প্লেসিং কোনো মতো পা দিয়ে ঠেকান স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের সুযোগ পেয়েছিল। মরক্কোর আক্রমণগুলো কিছু ক্ষেত্রে নষ্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে। অন্য দিকে স্পেন এই অর্ধে গোল না পাওয়ার জন্য ভাগ্যকেও দুষতে পারে। ১২০ মিনিট শেষ তিন মিনিট ইনজুরি সময় ছিল। সেই ইনজুরি সময়ে স্পেনের আক্রমণ একটি সাইড পোস্টে লেগে বাইরে যায়। ভাগ্য সঙ্গ দিয়েছে মরক্কোকেও। এর এক মিনিট আগে যে স্পেনের আক্রমণ ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রায় আত্মঘাতী গোল হজম করেই বসেছিল দলটি, ভাগ্য সঙ্গ না দিলে কি আর সেখান থেকে বেঁচে ফেরা যেত?
কালের আলো/ডিএস/এমএম