সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনী, যুদ্ধ নয় শান্তি চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 10:39 pm | December 13, 2022

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তোলার পাশাপাশি অনেক বেশি উন্নত, দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। ঘটিয়েছে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির সমন্বয়।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীর গর্বিত সদস্যরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলায় এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণেও সর্বোচ্চ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। বহির্বিশ্বেও নিজেদের সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছে। ফলে সব সময়ই সশস্ত্র বাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান।

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে উচ্চারণ করেছেন ‘বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে উন্নত ও শক্তিশালী করা হচ্ছে। কিন্তু তা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়।’ তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই।’

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’ এর গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেটের পাশাপাশি নন-ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেটসমূহ প্রতিহত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’

কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।’

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এই কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এই বছরের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানটি বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীর মহতী লগ্নে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কলেজের উন্নয়নে অনবদ্য সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য কলেজের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে থাকুক, সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই এই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।

তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার নেওয়া পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সবারর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সীমানা সমস্যা সমাধান এবং বিশাল সমুদ্র এলাকা ও এর সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আবারও দেশবাসীকে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। গুজবে কান দেবেন না। তিনি ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক রিজার্ভ এবং তারল্য থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতি যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে, তখন বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা উদ্দীপ্ত করেছে সশস্ত্র বাহিনীকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’ এর গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে দেয়া ভাষণেও এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে।

ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্টকে ‘ধন্যবাদ’, গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন
পরে প্রধানমন্ত্রী কোর্স সম্পন্নকারী অফিসারদের মাঝে গ্র্যাজুয়েশন (পিএসসি) সনদপত্র বিতরণ করেন। তিনি সকল গ্র্যাজুয়েটদের সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি তাদের সকলকে অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গীকার সামনে রেখে দেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই, আত্মনির্ভরশীল ও সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপদেশ প্রদান করেন।

তিনি সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ ২০২২ কোর্স সফলভাবে পরিচালনা এবং সম্পন্ন করার জন্য ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামানকে ধন্যবাদ জানান এবং সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, চলতি বছর ডিএসসিএসসি ২০২২ কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩৩ জন অফিসার, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪৫ জন অফিসার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ২৩ জন অফিসার, বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন অফিসার এবং মিশর, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলংকা, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাম্বিয়া থেকে আগত ৪৬ জন অফিসারসহ সর্বমোট ২৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এই বছর ১ জন নারী পুলিশ অফিসারসহ মোট ৮ জন নারী অফিসার গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যপর্যায়ের নির্বাচিত অফিসারদেরকে কমান্ডার ও স্টাফ হিসাবে ভবিষ্যতের গুরু দায়িত্ব পালনে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বমোট ৫ হাজার ৯৩৩ জন অফিসার, ১১ জন পুলিশ অফিসার এবং ৪৪টি বন্ধুপ্রতিম দেশের মোট ১ হাজার ৩০১ জন বিদেশী সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার এই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি, সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে