প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারার প্রতিবাদে ‘#আমিগুপ্তচর’
প্রকাশিতঃ 8:57 pm | January 30, 2018
সিনিয়র রিপোর্টার | কালের আলো:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংযোজিত ৩২ ধারার বিরুদ্ধে রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন সাংবাদিকরা। নিজেদের কাজ করার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সাংবাদিকরা ভার্চ্যুয়াল আন্দোলন শুরু করেছেন।
ওই আইনের খসড়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার অনেককেই দেখা গেছে নিজেদের ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করতে। না, আলাদা কোনো ফ্রেমে নয়, কাগজে ‘#আমিগুপ্তচর’ লিখে ছবি তুলে নতুন প্রোফাইল ছবি হিসেবে তা আপলোড করেছেন তারা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতিগোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে গোপনে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ জন্য ১৪ বছরের জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় কোনো অনিয়ম তুলে ধরতে গেলে এই আইনের ৩২ ধারা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনার সুযোগ আছে। যদি তাই হয় তাহলে ‘আমরা গুপ্তচর’। কারণ পেশাগত কারণে এবং সমাজের অনিয়ম তুলে আনতে সাংবাদিকরা গোপনে চিত্র ধারণ করে রিপোর্ট করে থাকেন।
একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট পারভেজ নাদির রেজা তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, … ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারার এই অপরাধ আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে বহুবার করেছি। যেহেতু আমি আমার অনেক সহকর্মীর মতো এই পেশা এখনো ছেড়ে যাইনি, বিদেশে পাড়ি দেইনি। যেহেতু আগামী দিনগুলোতেও সাংবাদিকতা করেই যেতে চাই, সেহেতু আমি নিজেকে আইনের ভাষায় গুপ্তচর হিসেবে ঘোষণা করলাম। আসুন স্বঘোষিত এই গুপ্তচরকে গ্রেফতার করুন এবং সাংবাদিকতার গলাটিপে হত্যা করার মিশনে সফল হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। #আমিগুপ্তচর
রভেজ নাদির রেজার পোস্টটি শেয়ার দিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের আরেক সংবাদকর্মী হাবিবুর রহমান #আমিগুপ্তচর লেখা সম্বলিত প্রোফাইল পিকচার আপ করেছেন তার ফেসবুক ওয়ালে।
যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ পাপ্পু তার তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, #Digital_Law_32। #চর_চর_আমি_গুপ্তচর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রিপোর্টে যদি গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত কোনো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ফুটেজ প্রচার করি। আর সেই খবরের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান করে দুর্নীতির সত্যতা পায়, তবে সেটা কিভাবে গুপ্তচরবৃত্তি হবে? উল্টো তারাই তো আমাদের গুপ্তচরবৃত্তির ফায়দা লুটল।’
মাছরাঙা টিভির রিপোর্টার মাজহার মিলন #আমিগুপ্তচর লিখে তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি করেছেন এবং লিখেছেন:
#আমিগুপ্তচর
এই দেশে অসাধুরাই সবচেয়ে শক্তিশালী। গোপনীয়তার সংস্কৃতি চর্চায় কঠোর অবস্থান তাদেরই। কোনটা গোপনীয় আর কোনটা ”পাবলিক/ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট” সেই ব্যাখ্যা কে দেবে? অসাধুদের মুখোশ উম্মোচনের উপায় তাহলে কি? অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিন কি শেষ হয়ে এল? গণমাধ্যম আর সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরতে এই আইনের ব্যবহার হবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
এভাবে আরো অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার সচিবালয়ে ৩২ ধারার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখানে সাংবাদিকদের কোনো সমস্যা দেখছি না। কেউ কোনো দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করলে সেটা কিন্তু অপরাধ হবে না। এটাকে অপরাধ মনে করার কোনো আইন নেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না এ আইন সাংবাদিকতার অন্তরায় হবে। এ আইন করেও আপনাদের থামাতে পারবো বলে মনে হয় না। আপনারা যেটা করেন, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে গোপনে ধারণ এটা কি ঠিক? এটা ঠিক নয়।’
গোপনে যদি কোনো দুর্নীতির ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয় তাহলে এটা কি গুপ্তচরবৃত্তি হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপনারা গোপনে ভিডিও করবেন কেন?