সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির সক্ষমতা, ডিসপ্লেতে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 8:22 pm | December 20, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বিজিবি দিবসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত রক্ষায় সক্ষমতার অনুপম নিদর্শন উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিজিপিতে সংযোজিত বিভিন্ন সরঞ্জাম বুলেট প্রুফ এপিসি, এটিভিসহ সীমান্ত রক্ষার আধুনিক কৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাহিনীটির সক্ষমতা। কুচকাওয়াজ প্রদর্শনীতে সীমান্ত সুরক্ষায় এসব অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত সক্ষমতা জানান দেয় দিন-রাত সদা প্রস্তুত বাংলার বীর জওয়ানরা।
আরও পড়ুন: সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর, অপরিসীম আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান বিজিবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির অপ্রতিরোধ্য ও দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলার দৃশ্যপট উপভোগ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম ও বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি দিবসে বাহিনীটির সক্ষমতা প্রদর্শনে প্রথমেই প্রদর্শিত হয় মোটর সাইকেল। কারণ, সীমান্তের সড়কগুলো সরু প্রকৃতির হওয়ায় চোরাচালান প্রতিরোধকল্পে মোটর সাইকেলই উত্তম বাহন হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত একটি বিওপিতে ২ থেকে চারটি মোটর সাইকেল থাকে। এরপর এগিয়ে আসে ফোর হুইলার মোটরসাইকেল, যা অল টেরেইন ভেহিকল (এটিভি) নামে পরিচিত। পার্বত্য অঞ্চল ও চরাঞ্চলে যেখানে গমনাগমন অসাধ্য ও কষ্টকর সেখানেই বিজিবির টহল নজরদারি বৃদ্ধির জন্য এটিভি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পরে এগিয়ে আসে অ্যান্টি ট্যাংক গার্ডেড ওয়েপন বা এটিজিডব্লিউ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর করার জন্য এই বাহিনীতে নতুন ১৪ টি অ্যান্টি ট্যাংক গার্ডেড ওয়েপন সংযোজন করা হয়েছে। অ্যান্টি ট্যাংক গার্ডেড ওয়েপন সাধারণত সাজোয়া ও অন্যান্য কংক্রিট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের জন্য মোতায়েন করা হয়ে থাকে। দেখানো হয় বুলেট প্রুফ যান এপিসি বা আর্মাড পার্সোনাল ক্যারিয়ার। ২০০৭ সালে বিজিবিতে এপিসি সংযোজন করা হয়। বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বহি:শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করতে এপিসির কার্যকারিতা অনস্বীকার্য।

দুর্গম সীমান্তে স্বল্প পানিতে বা কাদায় যেখানে ইঞ্জিনচালিত স্পিডবোট চলাচল সীমিত সেখানে চলাচলে সক্ষম সেখানে বেশ কার্যকর রাশিয়া থেকে কেনা এয়ার বোট। এয়ার বোটের মাধ্যমে নদী বা সমুদ্র বিধৌত স্থানে জরুরি অপারেশন পরিচালনা করে চোরাচালান এবং মাদকদ্রব্য পাচার রোধকল্পে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া যায়। প্রদর্শিত হয় দুর্গম পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটভিত্তিক একটি বিওপি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষে এই বাহিনীর ২২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রত্যন্ত আলীকদম, বাগাইহাট এবং রুমা পাবর্ত্য উপজেলার ১৪ টি বিওপিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাহায্যে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিওপিতে অবস্থানরত সদস্যরা অপারেশনাল কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করতে পারছেন।
এরপর অনুষ্ঠানে আসে একটি ভাসমান বিওপি। সুন্দরবন এলাকায় সীমান্তরক্ষা, সুন্দরবনবেষ্টিত নদী এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধ ও জলদস্যু উপদ্রুপ হতে স্থানীয় জনসাধারণের জানমাল রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে কাচিকাটা ও ১৮ ডিগ্রি ভাসমান বিওপি। এই বিওপি নির্মাণের ফলে নদীপথে কাঠ চোরাচালানসহ সকল ধরণের সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই ভাসমান বিওপি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুততম স্থানান্তর করা যায়, যা আভিযানিক সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

‘সোনার বাংলা বিনির্মাণে সংশপ্তক নির্মাতা’ ডিসপ্লেতে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীকে আসন গ্রহণের পর তাঁর সম্মানে নির্মিত ‘সোনার বাংলা বিনির্মাণে সংশপ্তক নির্মাতা’ শীর্ষক ডিসপ্লে উপভোগ করেন। বহুমাত্রিক ডিসপ্লেতে অংশগ্রহণ করে বিজিবির বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের ৪৫০ জন শিক্ষার্থী।
স্বাধীনতার প্রতীক দুরন্ত খোকা থেকে কালজয়ী মহাপুরুষ, কিংবদিন্ত মহানায়কের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহের অনবদ্য উপস্থাপন করা হয়। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে তৎকালীন ইপিআর বর্তমান বিজিবি ঠাঁই করে নেয় ডিসপ্লেতে।
স্বজনহারা, প্রবাস জীবনের নিরাপত্তাহীন বিচ্ছিন্নতাবোধের বিক্ষিপ্ত যন্ত্রণায় কাতর প্রধানমন্ত্রী। সবার চোখের মনি, শিশু শেখ রাসেলের ঘাতকের তপ্ত বুলেটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে স্বজনের রক্তে মিশে সেই স্রোতধারা নেমে যায় বঙ্গোপসাগরে। হিংস্র হায়েনারূপী হৃদয়হীন মানুষের বর্বরোচিত নৃশংসতা উপস্থাপিত হয় সুনিপুণ দক্ষতায়। ‘হাসু আপা’ বলে শিশু রাসেলের শেষ চিৎকার এ সময় বোবা কান্নার পাষাণভারে স্তব্ধ করে দেয় বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বিজিবি জানায়, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের সঙ্গে চা চক্রে অংশগ্রহণ করেন এবং শেষে পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি সদস্যদের বিশেষ দরবার গ্রহণ করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে