‘শেখ কামাল যুব গেমস’র দৃষ্টিনন্দন লোগো-মাসকট, ‘সমৃদ্ধ’ জাতীয় দলের ‘টার্গেট’ সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 5:17 am | December 24, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বিজয় বৈজয়ন্তী উড়ানোর মাসে, শুক্রবারের (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছিল একটু অন্যরকম। নাচে-গানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন শিল্পীরা। মুগ্ধতা ছড়িয়েছে থিম সংও। বাড়তি নজর কাড়ে চলতি বছরের শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস’র লোগো এবং মাসকট।

অনন্য উৎসবের আবহে দৃষ্টিনন্দন লোগোতে নির্মল তারুণ্যের অগ্রদূত শেখ কামালের চির অমলিন হাসির প্রতিকৃতি। যিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সেই আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে দিয়েছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের খোলনলচে। গড়েছিলেন দারুণ সব কীর্তি। মাসকটে ব্যবহার করা হয়েছে নয়নাভিরাম, প্রাণ চঞ্চলতার প্রতীক বাবুই পাখি। যা শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথাই জানান দেয়।

ক্রীড়াঙ্গনে নতুন জোয়ার শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের ইতিহাসে প্রায় চার বছরের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হচ্ছে বাংলাদেশ যুব গেমস। সারাদেশ থেকে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ খুঁজে বের করার সঙ্গে ভবিষ্যতে জাতীয় দলগুলোকে সমৃদ্ধ করার টার্গেটে লোগো ও মাসকট উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ যুব গেমসের। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) দ্বিতীয় আসরের নামকরণ করেছে দেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের কাণ্ডারি শেখ কামালের নামে।

তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উঠে আসার এই প্ল্যাটফর্মটি গড়বে আগামীর তারকা। যেমনটি স্বপ্ন দেখতেন দূরদর্শী ও গভীর চিন্তাবোধের অধিকারী বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁর বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে এক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস’র লোগো এবং মাসকট উন্মোচন করে সেনাবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদও মনে করছেন, ‘দেশের যুব ক্রীড়াবিদদের সবচেয়ে বড় এই আসরের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করার মাধ্যমে নতুন প্রতিভার সমন্বয়ে জাতীয় দলগুলো হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ।’

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন’র তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

২২ ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার সূচনা হবে আগামী ২ থেকে ১০ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে। উপজেলা থেকে উত্তীর্ণ ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারি জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে বিওএ। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। গেমসে খেলা হবে আরচারি, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, বাস্কেটবল, দাবা, ফুটবল, হ্যান্ডবল, হকি, জুডো, কাবাডি, কারাতে, শুটিং, সাঁতার, স্কোয়াশ, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, ভলিবল, ভারোত্তোলন, কুস্তি, উশু এবং সাইক্লিং।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এই বছরের ‘শেখ কামাল যুব গেমস’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল এমপি এবং কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে চান সেনাপ্রধান
এক সময় ক্রীড়াঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। দুর্দান্ত ছিলেন ফুটবল ও ক্রিকেটে। দু’টি খেলাতেই রয়েছে তার বাস্তব এক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি হিসেবেও পেয়েছেন সাফল্য। চলতি বছর কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের মতো বড় আসরে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

অতীতে যেখানে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতো বাংলাদেশ সেখানে এই বছর আশাতীত সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। পদক তালিকায় নাম লিখিয়েছে তাঁরা। প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে বিওএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সেনাপ্রধান পঞ্চম ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ আর্চারি দলের রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্ত খেলোয়াড় এবং ২২তম কমনওয়েলথ গেমসে টেবিল টেনিসে কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত পুরুষ দলকে আর্থিক পুরস্কার ও ক্রেস্ট উপহার দেন।

শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস’র লোগো এবং মাসকট উন্মোচন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য এবং নতুন প্রতিভার সমন্বয়ে আমরা জাতীয় দলগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক ও তারুণ্যের প্রতীক। তাঁর যৌবন দীপ্ত ক্রীড়াশৈলী দেশের তরুণদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। এই প্রজন্মের তরুণরাও খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা ও ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে আগামীতে হয়ে উঠবে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ।’

‘শেখ কামাল যুব গেমস’ এর মূল লক্ষ্য হল দেশব্যাপী উদীয়মান তরুণ-তরুণীদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করা এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত করা’-যোগ করেন বিওএ সভাপতি।

দেশের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‘শেখ কামাল যুব গেমস’ নিয়ে বেশ উৎফুল্ল জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এই গেমসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা ক্রীড়াবিদরাই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আগামীর পাইপলাইন। এবারের আসরে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী তিনি।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধানের জীবনসঙ্গী নুরজাহান আহমেদ; চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

কালের আলো/এমএএএমকে