ব্যথিত ম্লান মুখচ্ছবির মানুষের পাশে সেনাবাহিনী, ‘জনগণের সেনাবাহিনী’র প্রত্যয়ী কন্ঠ সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:55 pm | December 27, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ব্যথিত ম্লান মুখচ্ছবি ওদের। একেবারেই অসহায় ও বিপন্ন। অশীতিপরকে পরম শ্রদ্ধা বা শীর্ণ কাউকে মমতার পরশে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে উষ্ণতার অবলম্বন শীতবস্ত্র। ক্লান্ত ও দু:খের ভারে নত এসব ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায়ের পাশে মানবতার ঝুলি হাতে পাশে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাঙ্ক্ষিত ‘জনগণের সেনাবাহিনী’ উপহার দিতেই সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন; কুতুবদিয়া থেকে তেতুলিয়ায় একেকটি মানবিক মোহনীয় স্বপ্নের রচনা করছেন জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণের বাহিনী— এটাই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা। সুখে-দু:খে সব সময় দেশের মানুষের পাশে থেকে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে’ অবিসংবাদিত আন্তরিকতা আর নিজেদের চেতনার নির্যাসে প্রত্যয়ী কন্ঠ সেনাপ্রধানের।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ১১ পদাতিক ডিভিশন এবং ৬৬ পদাতিক ডিভিশন’র সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগিরহাট এলাকা ও ফুলবাড়ী উপজেলার চকচকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ১ হাজার ৮০০ অসহায় ও দু:স্থ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণকালে বিজয়ের মাসে মানবিক অনুভূতির গভীরতায় দৃঢ় সংকল্পের বার্তাই ছড়িয়ে দেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

জানা যায়, দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বমানের সেনাবাহিনীতে উন্নীত করতে শীতকালীন প্রশিক্ষণে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনা সদর ও সকল ফরমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে মোতায়েন রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণ পরিদর্শনের পর মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১১ পদাতিক ডিভিশন এবং ৬৬ পদাতিক ডিভিশন’র দায়িত্বপূর্ণ শীতকালীন প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আক্ষরিক অর্থেই মানসপটে ‘জনগণের বন্ধুু’ চিত্রপট এঁকে দিতে সেখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক করে তুলেছেন আরও ‘নিবিড়’।
দিনাজপুরেও সেনাপ্রধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রশিক্ষণকালীন সময়ে সেনাবাহিনী তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবে অসহায়, দুঃস্থ ও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিনাজপুর অঞ্চলের অসহায়, দু:স্থ ও গরীব-দু:খী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রশিক্ষণ এলাকায় অসহায়, দু:স্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণের এই মানবিক কার্যক্রম সর্বস্তরের মানুষের মাঝে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।’ তিনি মেধা, প্রজ্ঞা আর পেশাদারিত্বের গভীর অনুরণনে মানবিক পথচলায় উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করে তুলেছেন নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, শীতবস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শীতকালীন প্রশিক্ষণ এলাকায় অসহায়, দু:স্থ ও গরীব-দু:খী মানুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদানে ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ওষুধ। ডায়াবেটিক, হাইপার টেনশন, সংক্রমিত চর্মরোগ, বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগ, গর্ভবতী-প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা সেবা ও বিশেষ পরামর্শ প্রদান এবং অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে চোখের ছানিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছে। পরিচালিত হচ্ছে বিনামূল্যে ‘কৃষক বান্ধব ভেটেরিনারি সেবা ক্যাম্পেইন’। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগীর বিনামূল্যে টিকা এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি খামারীদের গবাদিপশু পালন, ব্যবস্থাপনা ও খামার স্থাপন সংক্রান্ত কারিগরি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সেবামূলক এই ক্যাম্পেইনটি খামারীদের মাঝে গবাদিপশু পালনে উৎসাহের সৃষ্টি এবং বেসামরিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে মনে করছে আইএসপিআর।

সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর আত্মপ্রকাশ, প্রস্তুত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৈনিকদের দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বাড়াতে ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’ নীতিতে জোর দিয়েছেন। শীতকালীন প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উচ্চারণ করেছেন ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার পাশাপাশি দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করে সুখ্যাতি ও প্রভূত সুনাম অর্জন করেছে।
তিনি সৈনিকদের মনোবল উন্নত রেখে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকারও নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. খালেদ-আল-মামুন, ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও রংপুরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে