আলোর ঝরনাধারায় স্বাগত ২০২৩, নবোদ্যমে শুরু হোক পথচলা

প্রকাশিতঃ 12:02 am | January 01, 2023

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

অসীমের পানে মহাকালের যাত্রায় সূচিত হলো আরও একটি মাইলফলক। মহাকালের যাত্রায় নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে আলোর ঝরনাধারায় শুরু হলো নতুন বছর। ‘স্বাগতম খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০২৩’। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়েছে ২০২২। পুরনো বছরের ভুল, হতাশা, সংশয়, সঙ্কট ও উদ্বেগ কাটিয়ে আর সব দুঃখ, গ্লানি আর ব্যর্থতাকে দূরে সরিয়ে আজ থেকে নতুনভাবে পথচলার শুভ সূচনা। নতুন আশায় নতুনভাবে দিনযাপন। হ্যাপি নিউ ইয়ার। আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ২০২৩ সালের দিনপঞ্জি। অভিবাদন নতুন বছরকে। নবোদ্যমে যাত্রার দৃপ্ত শপথ কন্ঠে কন্ঠে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক নববর্ষে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’

সকালে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের সূর্যোদয় হলেও শনিবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। ইতিহাস বলে, মানুষের এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহাই তাকে নিয়ে এসেছে এতদূর। তাই সব অপশক্তি আর বাধা জয় করে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে দুরন্ত-দুর্বার গতিতে।

বাঙালির জাতীয় জীবনে অগ্রযাত্রার ধারা শুরু হয়েছে। নতুন বছর ২০২৩ সালে যুক্ত হবে নতুন নতুন মাত্রা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে-এমন প্রত্যাশা দেশের সব মানুষের। গত বছর যে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল তার অনেকখানি হয়তো পূরণ হয়নি। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না, নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। এটাই আজকের দিনের প্রত্যয়।

নতুন খ্রিষ্টীয় বছরের আগমন উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের রাজনীতি সবসময় নির্বাচনমুখী। আগামী বছরের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটকে ঘিরে পুরোমাত্রায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি ক’দিন আগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছে। তারা রাজপথকে আন্দোলনের নিশানা করেছে। পুরনো বোতলে নতুন মদ কায়দায় জামাত পরশু পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে। বিএনপি-জামাত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে অনির্বাচিত শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর অপকৌশল শুরু করেছে। তবে নতুন বছরে মানুষের প্রত্যাশা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেন অব্যাহত থাকে। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত, লড়াই, সহিংসতা আর কখনো না আসুক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। নারীর প্রতি আরও মানবিক হোক সমাজ। সমুন্নত থাকুক মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা।

সাধারণ মানুষ নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চায়। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গত বছরও সাধারণ মানুষকে অসহনীয় অবস্থায় ফেলেছে। শীতের এই মৌসুমেও সবজির বাজার বর্তমানে চড়া। দিন আনে দিন খায় মানুষ চায় যেন খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন। নতুন বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হাতের নাগালে না থাকলেও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে-এটাই তাদের প্রত্যাশা। যেসব কালোবাজারি বা চক্র কারসাজি করে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি সাধারণ মানুষের।

শিল্পায়নের জন্য আরও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো জরুরি। শিল্প ও উৎপাদন খাতের বিকাশ মানেই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এ বিপ্লবে জয়ী হতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। মেধাবী নতুন প্রজন্মকে এ বিপ্লবে শামিল করতে দরকার তথ্যপ্রযুক্তির আরও আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ-এটা নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। সব প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে সবার একটাই প্রার্থনা-শুভ হোক ২০২৩। অবিরাম ভালোবাসা সবার জন্য।

কালের আলো/এমএএএমকে