সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক প্রতিটি হৃদয়
প্রকাশিতঃ 10:33 am | January 01, 2023
মাহমুদ আহমদ :
শুরু হলো ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ইংরেজি নতুন বছর। সবাইকে জানাই নতুন বছরের ফুলেল শুভেচ্ছা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন কিছু করার ও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় কার না থাকে। নতুন বছর মানেই নতুন পরিকল্পনা, নতুন কিছুর প্রত্যাশা। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার উৎসব নতুন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এ রীতির প্রচলন রয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সর্বজনীন উৎসবগুলোর মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অন্যতম একটি।
বিগত বছরে আমাদের বিশাল কিছু অর্জন রয়েছে। বিশেষ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। পুরোদমে চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি, পায়রা বন্দর প্রকল্পের কাজ। এসব মেগা প্রকল্প বিশ্ব কাতারে আরও এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। দেশের উন্নয়নমূলক এসব প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছি আমরা। গণপরিবহনে নতুন সংযোজিত এই অত্যাধুনিক মেট্রোরেলে চড়ার জন্য কেবল ঢাকার মানুষ নয়, বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষজন রাজধানীতে আসছেন। বর্তমান সরকারের সময়কালে বাংলাদেশের অফুরান অর্জন, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশ সদর্পে এগিয়ে চলছে এবং চলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।
গত কয়েকটি বছর মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাসী মহা আতঙ্কে অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন অর্ধকোটির অধিক মানুষ। সামনে আরও কি পরিস্থিতি দাঁড়ায় তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন; কেননা করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ইতিমধ্যে চীনসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যাতে এর সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরে সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাই তো নতুন বছরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রত্যাশা- তিনি যেন বিশ্বকে করোনামুক্ত করেন। বিশ্ববাসী আবার যেন নির্ভয়ে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারে আর প্রিয় মানুষটিকে বুকে টেনে নিয়ে স্নেহের পরশে সিক্ত হতে পারে।
নতুন বছরে করোনামুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমরা আলোড়িত উদ্দীপিত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে, নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে।
সুখ-দুঃখ আর সব হারানোর ব্যথাকে ভুলে নতুন কিছুর আশা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতইনা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার কবিতায় ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ ‘দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ/তোমার ফুৎকারলুব্ধ ধুলা-সম উড়ুক গগনে,/ভ’রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধসনে/আকুল আকাশ/দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।’ রবীন্দ্রনাথের এ কথাগুলোর মতোই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ।
নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে ফেলে আসা বছরের দিকে তাকালে জনজীবনে আলোড়ন তোলা অনেক ঘটনাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতক ঘটনা আমাদের লজ্জিত করেছে। দেশ ও জাতির জন্য বদনামের কারণ হয় এমন কোনো ঘটনা যেন নতুন বছরে না ঘটে সেই প্রত্যাশাও আমরা করছি।
একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত ও সেই মতের পার্থক্য থাকবে। এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই মতপার্থক্য মানে জাতিতে বিভক্তি নয়। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জনগণের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা জরুরি। আমরা চাই একটা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে মানুষে মানুষে সংঘাত থাকবে না। দিন-দুপুরে কেউ খুন হবে না। আমাদের বোনরা ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হবে না। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাবে না। ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী সব নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার থাকবে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। তাহলেই আমাদের দেশটা সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত হবে।
আমাদের অবশ্যই এটি শিকার করতে হবে যে, বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। এখন আর আমাদের কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস দেখায় না। আমাদের দেশের উন্নতি দেখে পাকিস্তানিরা এখন এটি বলতে বাধ্য হচ্ছে ‘খোদাকে ওয়াস্তে হামে বাংলাদেশ বানাদো’। আজ আমরা পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রজেক্ট নিজেদের অর্থায়নে শেষ করেছি এবং মেট্রোরেল চালু হয়েছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। এটা আমাদের জন্য এক বিশাল অর্জন। নতুন বছর নতুন লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে যাবে।
নতুন বছরে সবার প্রত্যাশা, সেই চলার পথে যেন সঙ্গী হয় দেশের প্রতিটি মানুষ। কাউকে পেছনে ফেলে কিংবা প্রত্যাখ্যান করে নয়, অগ্রগতির অংশ হোক ঐক্যবদ্ধ জাতি।
আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক জাতির জীবনে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক নতুনভাবে সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের।
লেখক: গবেষক