৫১ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম আইজিপি, অনন্য চূড়ায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

প্রকাশিতঃ 10:26 pm | January 09, 2023

৫১ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম আইজিপি, অনন্য চূড়ায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

নতুন বছর। নতুন ক্যালেন্ডার। সম্ভাবনার নবদিগন্তে স্বপ্নের অভিযাত্রা। ভরা পৌষের ধবল কুয়াশার হিমেল চাদর সরিয়ে সোনালি আলোর সকাল উপহার দিয়েছিল সূর্য। লাল-সবুজের বাংলাদেশের সোমবারের (০৯ জানুয়ারি) সূর্যাস্তও তাঁর বর্ণীল জীবনেও যেন এঁকে দিয়েছে অনবদ্য এক স্মৃতিরেখা; মাইলস্টোন। এই দিনটিতেই অনন্য চূড়ায় তিনি দাঁড় করালেন নিজেকে। যেখানে তাঁর সমকক্ষ বা পূর্বসূরী নেই কেউই!

বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ৫১ বছরের ইতিহাসে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), যিনি প্রথমবারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন। অবগাহন করলেন সাফল্যের সপ্ত সমুদ্রে। যেখানে অপ্রাপ্তি বলে নেই কিছুই। কানায় কানায় ভরেছেন অর্জনের প্রতিটি পাতা।

উজ্জ্বল-বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের জ্যোতির্বলয়ে দেশের টেকসই নিরাপত্তার এই অধিনায়ক বিদায়ী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। সেটি ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এবার তিনি লিখেছেন অমর ইতিহাসের নতুন কাব্যগাঁথা। সততা, পেশাদারিত্ব আর গভীর দেশপ্রেমের নির্যাসে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাসের কাপ্তান হিসেবেই আরও দেড় বছর নেতৃত্ব দিবেন বাংলাদেশ পুলিশকে।

সোমবার (০৯ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আইজিপি হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার), পিপিএম’র চাকরির মেয়াদ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সম্ভবত আইজিপি হিসেবে তিনিই একমাত্র, যিনি মনের শোকেসে আরাধ্য শুন্যস্থান পূরণের অধিকারী বিরল এক ব্যক্তিত্ব। এদিন সন্ধ্যার পর থেকে দূরের-কাছের মানুষের অবিরাম ভালোবাসা আর অগ্রজদের আর্শীবাণীর উত্তুঙ্গ স্রোত আর অবারিত আনন্দের ফল্গুধারায় ভাসছেন বাংলাদেশ পুলিশের নেতৃত্বে নতুন ইতিহাসের এই নির্মাতা।

ঘনিয়ে আসছে ১১ জানুয়ারি। কে হচ্ছেন পুলিশের আইজি, এমন প্রশ্নে বিশ্লেষণী প্রতিবেদন ঠাঁই করে নিয়েছিল সপ্তাহখানেক গণমাধ্যমে। স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছিল সবার ভেতর। কেউ কেউ আগাম ইঙ্গিত করেছিলেন নতুন মুখ আসছে। কারও কারও ভাষ্য ছিল- নির্বাচনকালীন কঠিন সময়ে নতুন নয় পুরনোতেই আস্থা রাখবেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। অর্থাৎ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনই থাকছেন তিন তারকা পদটিতে।

‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও, যাও গো এবার যাবার আগে’—কবিগুরুর এই অমলিন গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই যেন চেয়েছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। সবার প্রত্যাশা ছিল- তিনি যেন বাংলাদেশ পুলিশকে রাঙিয়ে দিয়ে যান আরও কিছুটা সময় আপন আলোয়। হয়েছেও ঠিক তাই। সোমবার (০৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা নামতেই এসেছে সুসংবাদ। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মিলিত যোগফলের বহি:প্রকাশ আনন্দ বাঁধ ভেঙেছে। সুনামগঞ্জের ধুলো পায়ে জড়িয়ে স্বপদে থাকা নয়—এ যেন নতুন অভ্যুদয়! বাংলাদেশ পুলিশের সোয়া দু’লক্ষ সদস্যের হৃদমাঝেই তাঁর বসবাস।

সহজেই যদি সব পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে তাহলে ঘাম রক্তের মূল্য থাকে কতটুকু? তুলির প্রথম আঁচড়েই চিত্র ফুটে উঠলে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে ক’জন মনে রাখতো? রবীন্দ্রনাথ কি প্রথম দিন থেকেই কবিগুরু হয়ে গেছিলেন? চড়াই-উৎরাই না পেরুলে লাইফ বিউটিফুল হয় না। দিগ্বিজয়ী সকল বীরের অপূর্ণতার জাহাজ একদিন পূর্ণতার বন্দরে নোঙর করে! ঠিক তেমনি নিজের ঈর্ষণীয় সৎ চাকরি জীবনে ধাপে ধাপে নিজেকে প্রমাণ করেই সেই পূর্ণতার গন্তব্যে প্রথম আইজিপি হিসেবে নামাঙ্কিত করেছেন নিজেকে। পৌঁছে গেছেন সাফল্যের সোনালী তোরণে।

অমর-অমলিন-অজর-অক্ষয় ইতিহাসের এই কারিগর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সাফল্যময় অর্জনের প্রয়াসী হওয়ার সংকল্প নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন। অভিজ্ঞতার ঋদ্ধতায় অকপটে বলেছিলেন, ‘পুলিশের সেবা দেওয়ার মূল কেন্দ্র থানা। থানাই জনগণের জনগণের আস্থা ও ভরসার স্থান।’ সেদিন আইজিপি মনের অন্তর্গত অনুভূতিতে প্রভাতের সূর্যের মতোই যেন তাঁর স্বপ্নিল কার্যকর ঘোষণা, থানাকে সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রূপ দেওয়ার।

তিনি খোলনলচে পাল্টে আরও উজ্জ্বল করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়া ‘জন্মযোদ্ধা’ গর্বিত বাহিনীটিকে। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের কারিগর হিসেবে থানার দায়িত্বশীলদের আইনি সক্ষমতা আর মানবিক মূল্যবোধকে গ্রোথিত করার পাশাপাশি সেবা প্রার্থীদের নির্ভয়ে থানায় আসতে পরিস্ফুট বার্তা দিয়েছিলেন। চলতি বছরের পুলিশ সপ্তাহেও নিজের এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

একজন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বহুমাত্রিক নেতৃত্বের বলিষ্ঠতায় বারবার বিজয়ী হয়েছেন। উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথে হেঁটেছেন। নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অনেক অর্জন-সাফল্যকে মুঠোয় ভরেছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে সতের কোটির বাংলাদেশকে নিরাপদ, নিরুপদ্রব ও নিরুদ্বিগ্ন রাখতেও সক্ষম হবেন তিনিই। এর আগে এলিট ফোর্স র‍্যাবের নেতৃত্বে থাকাকালীন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ের হাসি হেসেছেন। চাকরি জীবনের পুরোটা সময় নিবিষ্ট, প্রগাঢ়, তীব্র এবং ঐকান্তিক থেকেছেন দেশের কল্যাণে, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বাংলাদেশ বিনির্মাণে। ফলত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তার মাথায়।

হীরের দ্যুতিতেই তিনি ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন জনমানসে। পুলিশের নবযাত্রায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাঁর নাম। একটি জনবান্ধব, আধুনিক ও যুগোপযোগী ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়তে বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিচল আস্থা রেখেছেন তাঁর ওপর। জনগণের আত্নার স্পন্দন ছোঁয়া এই আইজিপিই পারবেন ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়তে। তাঁর দক্ষ, গতিশীল ও সৃজনশীল নেতৃত্বের ইতিহাস বলছে সেই কথাই। অভিবাদন মাননীয় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

কালের আলো/এমএএএমকে