সঙ্কট মোকাবেলায় দক্ষতার পুরস্কার, স্বাস্থ্যের ডিজি খুরশীদ আলমেই ‘আস্থা’ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 9:56 pm | January 10, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

কোন লবিং-তদবির করেননি! সম্ভবত তাকে খুঁজে বের করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। কঠিন চ্যালেঞ্জিং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ পেয়ে চমকই সৃষ্টি করেছিলেন অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সময়টা ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। যখন করোনা মহামারিতে দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল। দুর্নীতির বান ডেকেছিল স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর। দুর্নীতির অপবাদ নিয়ে পদ ছাড়া আবুল কালাম আজাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন আপাদমস্তক বিনয়ী, ‘আদর্শ সার্জন’ ডা: খুরশীদ।

কিন্তু দায়িত্বের মাত্র ৫ মাসের মাথায় তাঁর নিয়মিত চাকরি শেষ! ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অসুস্থ স্বাস্থ্যখাতকে সুস্থ করে তুলতে সরকারপ্রধান আস্থা রাখলেন তাঁর ওপর। দু’বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন তিনি। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালনে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের গাইডলাইনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখলেন। এ সময়টিতে তাঁর নেতৃত্বে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা জীবনবাজি রেখে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। সুরক্ষিত করেছেন দেশকে। নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপের ফলে এখনও সংক্রমণ থেকে বেশ সুরক্ষিত রয়েছে বাংলাদেশ। করোনা টিকাদানে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার সিদ্ধান্ত একদম ‘পারফ্যাক্ট’।

একের পর চ্যালেঞ্জ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কেটে গেলো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দুই বছর। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয় সেই মেয়াদও। আবারও নানা প্রশ্নও। কারও কারও আগ বাড়িয়ে বলা, ফের ডা: খুরশীদ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে পাইপ লাইনে থাকারা হতোদ্যম হয়ে পড়বেন। কিন্তু মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শক্ত হাল ধরা ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নেতৃত্বের সক্ষমতায় আবারও তাকে অধিদপ্তরটির মহাপরিচালক হিসেবে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রয়েছে তাঁর ওপর। চলতি বছরের মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।

ফেলে আসা দিনগুলোতে চোখ মেলে তাকালে দেখা যাবে, ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদটিকে জনস্বার্থে নিবেদন করতেই নিজের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। দিন-রাতেই হিসাব না করেই ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে সময় দিয়েছেন। সুলুক সন্ধান করেছেন অধিদপ্তরের মুখ থুবড়ে পড়ার অপার রহস্য। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছেড়েছেন আবার ছক কষেই। অফিসের চার দেয়ালে নিজেকে বন্দি না করে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায়। ‘মিডিয়া মার্চ’ না করে তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবার সমস্যা সনাক্ত করেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পর কমপ্লেক্সে ঢু মেরেছেন। সংশ্লিষ্টদের কথা শোনেছেন, মন দিয়েই।

স্বাস্থ্য অঙ্গনে অনেকটাই নিয়ম হতে যাওয়া অনিয়মকে হিমাগারে পাঠানোর সব ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত করেছেন ডিজি খুরশীদ। তববির বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন। ক্রিকেট মাঠের ২২ গজের দাপুটে ওপেনারের মতোই এই পরিমন্ডলে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন ‘ডিপেন্ডেবল’ হিসেবে। শুধু কী তাই? ভৎর্সনার চিরায়ত প্রথায় না হেঁটে দায়িত্বশীলদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। সংশোধনের সময় দিয়েছেন। মোবাইল ফোনে হলেও নিজেই ফলোআপ করেছেন। কাজ না হলে সরাসরি অ্যাকশনে গেছেন। দায়িত্বশীল কারও বাড়াবাড়িতে নিজেই ক্ষমা চেয়েছেন, ঔদার্য্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পরিবর্তনের একটি ধারার সূত্রপাত করতেই উদয়াস্ত মনোনিবেশ করেছেন।

অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে বারবার তাঁর ওপর সরকারপ্রধানের আস্থায় যারা নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন এখন তারাও শুকনো মুখে ডিজি খুরশীদের সক্ষমতার কথা স্বীকার করছেন। বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় মেলে ধরলেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি ঝানু ‘ডিসিশন মেকার’।

সরকারপ্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে পুনরায় তাকে বেছে নিয়েছেন। এটিকে আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সততা ও কর্মদক্ষতার পুরস্কার হিসেবেই দেখছেন অনেকেই। তাঁর মেধা-মনন ও একদল পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অক্লান্ত শ্রমে স্বাস্থ্যসেবা খাত এখন সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। ছোট্ট দেশ হয়েও ব্লুমবার্গের তালিকায় শীর্ষে ওঠে আসার সক্ষমতার উদাহরণ বাংলাদেশ। এমন কর্মমুখর, আদর্শ ও বিবেকবান নেতৃত্বের মুখে তৃপ্তির হাসি মানায়।

কালের আলো/এমএএএমকে