বারবার ‘টার্গেট’ ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান?

প্রকাশিতঃ 11:10 pm | January 10, 2023

কালের আলো রিপোর্ট :

পানির দাবিতে রাজধানীতে আর হাহাকার নেই। চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদনে সক্ষমতা দেখিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ফলে পানি ইস্যুতে মাঠ গরমের সুযোগ নেই। কিন্তু অদ্ভুত মিথস্ক্রিয়ায় আলট্রা রাইট, আলট্রা লেফট এক হয়ে যাচ্ছে। আষাঢ়ে গল্পের কল্পিত কাহিনীতে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে বারবার। আদতে এই নিশানা ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ ষড়যন্ত্রেরই নামান্তর।’ বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেই অভিন্ন কন্ঠে উচ্চারণ ঢাকা ওয়াসার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার।

‘ঢাকা ওয়াসাকে বদলে দেয়ার সফল কারিগরের প্রতি সরকারপ্রধানের আস্থা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই পানি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়ার ‘রোল মডেল’। এমন দক্ষ নেতৃত্বকে ‘টার্গেট’ কোন ধারার অপরাজনীতির বহি:প্রকাশ সেটি বুঝতে বিশারদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাম্প্রতিক একটি গণমাধ্যমের নিউজে চোখ রাখুন। যেখানে বলা হয়েছে ঢাকা ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ টি বাড়ি রয়েছে। টাকার অঙ্কও হাজার কোটি! কী গোয়েবলসীয় কারবার!’-গজর গজর ভঙ্গিতে বলছিলেন সংস্থাটির একজন প্রকৌশলী।

উন্নয়নের আর সাফল্যের ধারাপাতের পক্ষে ঢাকা ওয়াসার প্রতিটি কর্মীর এমন মন্তব্য এক ও অভিন্ন। তারা অভিযোগ করেছেন, মিডিয়া মার্চের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে বিতর্কিত করতে ঢালাওভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলব চক্রটি আপাতত দৃশ্যপট থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিলেও নতুন বোতলে পুরনো মদ কায়দায় বিশেষ মহলের আবির্ভাব ঘটছে। ওয়াসার অনিয়ম দুর্নীতি প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে অচ্ছুতদের বদ মতলব বাস্তবায়নে নানা কায়দা কানুনে বিস্তৃত হচ্ছে প্রোপাগান্ডা।

স্বয়ং ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান নিজেও বলেছেন, ‘গত সোমবার একটি দৈনিকে আমার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। এই প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই। এই ১৪টি বাড়ির মধ্যে শুধুমাত্র একটি বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে কেনা। বাকি কোনোটিই আমার বা আমার পরিবারের কারও নয়।’

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের নিজ কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে ওই গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠায় ঢাকা ওয়াসা। সেখানে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে হীন অপপ্রচার বলে গণ্য করে এ বিষয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়। এদিনের মতবিনিময়েও চ্যালেঞ্জে অনড় তাকসিম এ খান। বলেছেন, ‘যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করার জন্য যে ডাহা মিথ্যা প্রতিবেদন করলো, এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করবো। এমন নয় যে আমি এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছি বরং আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ঢাকা ওয়াসায় চাকরি করতে এসেছি। আমি অনেক আগে থেকেই পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। স্ত্রী-সন্তান সেখানে অনেক ভালো মানের চাকরি করে। আমি এখানে একটা টাকাও অসৎ উপায়ে উপার্জন করিনি। ফলে টাকা সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) পাঠানোরও কোনও প্রশ্ন আসে না।’

নৈতিক দৃঢ়তায় বরাবরই উত্তীর্ণ হয়েছেন ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। ২০০৯ সালে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় ছয় দফা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপরেই পূর্ণ আস্থা রাখেন। ফলে তাকে ষষ্ঠবারের মতোন আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার। কাজের মাধ্যমেই নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তাঁর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বেই ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় হয়ে উঠেছে ‘রোল মডেল’।

কথা দিয়েছিলেন রাজধানীর এককজন মানুষও পানি সেবার বাইরে থাকবে না। প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। রাজধানীর পানি সরবরাহের নেটওয়ার্ক পদ্ধতি সাজিয়েছেন নতুন করে। ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া বা ডিএমএ নামে একটি নেটওয়ার্ক পদ্ধতির আওতায় এনেছেন ওয়াসাকে। ঢাকাকে ১৪৫টি ক্লাস্টারে (ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া বা ডিএমএ) ভাগ করেছেন। ইতোমধ্যে বেশিরভাগের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ডিএমএর কাজ ২০২৩ সালের মধ্যেই শেষ হবে। এই কাজ শেষ হলেই পানির মান নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না। একেকটি ভাগে পানি ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক করা হয়েছে। প্রতিটি নেটওয়ার্ক অন্যজনের থেকে আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এতে ২৪ ঘণ্টা এই এলাকাগুলোয় পানি থাকে। এক জায়গা থেকে নোংরা পানি অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা স্মার্ট পানি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। এখন ৯০ ভাগ স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করতে পেরেছে ঢাকা ওয়াসা। সামনের দিনগুলোতে এই স্বচ্ছতা ১০০ ভাগে নিয়ে যেতে চান এমডি তাকসিম এ খান।

কী বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ে?
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রতিটি প্রশ্নে টু দ্য পয়েন্টে জবাব দেন তাকসিম এ খান। ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার এক টাকার কোনো সম্পত্তি নেই।’ জীবনে কোনোদিন হারাম পয়সা খাননি দাবি করে তিনি বলেন, ‘অসৎ উপায়ে এখন পর্যন্ত এক টাকাও উপার্জন করিনি। আমার যা উপার্জন তা সবার কাছে স্পষ্ট। আয়কর নথিতে আমার সব উপার্জনের তথ্য স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। এর বাইরে একটা টাকাও আমি অসৎভাবে আয় করিনি।’

একটি গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাকসিম এ খান বলেন, ‘আমি যা বেতন পাই তা সবার কাছেই ওপেন বিষয়। তাই এখান লুকোচুরির কিছু নেই। এই বেতন ছাড়া আমার আয়ের আর কোনোও পথ নেই। আমি যা আয় করি তা সৎভাবে উপার্জন করি যার একটি টাকাও আমার অবৈধ নয়। এই আয় দিয়ে আমার যেভাবে চলা যায় সেভাবেই আমি চলি। আমার স্ত্রী সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সেখানে ওয়েল স্টাবলিস্ট তাই তাদের টাকা পাঠানোর আমার কোনো দরকার হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমি দুর্নীতি করেছি এমন অনেক রিপোর্ট এর আগে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু আমি কোনো দুর্নীতি করিনি, তাই সেসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে রিপোর্ট করা হলো সেটাও ভিত্তিহীন। যুক্তরাষ্ট্রে আমার কোনো বাড়ি নেই। সেখানে ১৪টি বাড়ির ব্যাপারে ডাহা মিথ্যা একটা প্রতিবেদন ছাপানো হলো। সেখানে আমার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান থাকে, তারা দুজনেই ভালো চাকরি করে। আমার টাকারও তাদের কোনো প্রয়োজন নেই। বরং আমার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারাই আমাকে মাঝে মধ্যে টাকা পাঠায়।’

‘ঢাকায় কোনো সম্পত্তি বা জমি-বাড়ি কেনার দরকার হয়নি জানিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়ির দিক থেকে অনেক সম্পত্তি, জমি পেয়েছেন। সে কারণে আমার ঢাকায়ও কিছু কেনার দরকার হয়নি। এছাড়া আমার স্ত্রী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সেখানে ভালো চাকরি করায় তাদের সেখানেও ভালো অবস্থান আছে। আমি যা বেতন পাই সব মিলিয়ে আল্লাহর রহমতে আমাদের ভালোভাবে চলে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে উপার্জনের দরকার হয় না আমার’- যোগ করেন ওয়াসা এমডি।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি এখানে এসেছিলাম। আমি এখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে- যে পরিবর্তন করছেন সেটা শেষ করে যান।’

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি বাড়িতে আমার পরিবার সেখানে বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছেন। আর একটি বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে। আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।’

স্ত্রী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে ‘ওয়েল স্টাবলিস্ট’ জানিয়ে তাকসিম এ খান বলেন, ‘সেখানে একটি বাড়ি কেনায় খুব অসুবিধার কিছু নেই। আমার স্ত্রীর নামেই ওই একটা বাড়ি আছে। সেটাকেও বাড়ি বলা যাবে না, এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট।’

তিনি বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনের সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, তারা যেগুলো দিয়েছে, আপনি ইন্টারনেটে আমাদের নাম সার্চ করলে দেখতে পারবেন যে আমি কোথায় ছিলাম এবং কী করেছি। আমার পরিবার ওখানে ভাড়া থাকার সুবাদে সেখানকার পাঁচটি বাড়ির ভাড়াটিয়ার তালিকায় আমাদের নাম আছে। বিষয়টি যে কেউ খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।’

কালের আলো/জিকে/এমএইচ