ওবায়দুল কাদেরই কী হচ্ছেন বঙ্গভবনের বাসিন্দা?
প্রকাশিতঃ 10:29 am | January 24, 2023

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:
নতুন রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই হিসেবে নতুন বাসিন্দা পাবে বঙ্গভবনও। আলোচনায় একাধিক নাম ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন, এমন গুঞ্জন-গুঞ্জরণ চলছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত রাজনীতিক হিসেবে তিনি স্বীকৃত। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও গড়েছেন ইতিহাস। রাষ্ট্রপতি পদে তিনি নিজেকে যোগ্য মনে না করলেও যোগ্যতার দিক থেকে তাঁর সমকক্ষ নেই কেউ। অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবেই তিনি হতে পারেন জিল্লুর রহমান, মো.আবদুল হামিদদের উত্তরসূরি।
বলাবলি হচ্ছে বা জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে উঠেছে- বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদেরই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রত্যাশা করছেন, মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে সুনামের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলে আসা ওবায়দুল কাদের শেষাবধি বঙ্গভবনের বাসিন্দা হবেন।
সরকারের ও আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চমক’ দেখাতে পারেন। এই ‘চমক’ হতে পারেন ওবায়দুল কাদের। তিনি যখন প্রথমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তখনও আগেভাগেই আলোচনা তৈরি হয়েছিল এই পদে তিনিই আসছেন। তখন ওই সময়ের সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘চমক’ কী সেটি নেত্রী আর আমি জানি’। শেষাবধি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এমনকি একমাত্র তিনিই টানা তিনবার এই পদে থাকার ‘মাইলস্টোন’ স্পর্শ করেছেন।
দল ও সরকার সমান গতিতে সামলাচ্ছেন এমন ক’জনের
একজন ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পর দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। রেকর্ড সময় মন্ত্রীত্ব করছেন। এক জীবনে অনেক পেয়েছেন। তিনি নিজেও তৃপ্ত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজনীতিতে তার প্রাপ্তির গল্প গর্বের সঙ্গেই উচ্চারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তাকে বলেন, ‘ম্যাজিক ম্যান’ ওবায়দুল কাদের।’ একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারে নিজের মন্ত্রী হওয়ার স্মৃতিচারণ করেছেন। বারবার প্রমাণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অকৃত্রিম স্নেহ আর আস্থায় যখন যে দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই নিজেকে মেলে ধরেছেন।
ওবায়দুল কাদের যে পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, এই গুঞ্জণের পালে জোরালো বাতাস লাগে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদের পদোন্নতিতে। তিনি এবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ক্রমিক নম্বরে এক নম্বরে এসেছেন। আগে তার ক্রমিকে অবস্থান ছিল তৃতীয়। ওবায়দুল কাদের এবারের সম্মেলনের আগে দেশের বিভিন্ন জেলা চষে বেড়ান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। শারীরিকভাবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ। ফলে পরিচ্ছন্ন ইমেজের পরিশ্রমী রাজনীতিক ড.হাছানের পদোন্নতি যে ওবায়দুল কাদেরের বড় দায়িত্বের ইঙ্গিত সেটি মোটা দাগে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, ওবায়দুল কাদেরের উত্তরসূরি হিসেবে তার মতোই সঙ্কট মোকাবেলা করে দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে কার্যকর নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সক্ষমতা ড.হাছান মাহমুদের রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে ওবায়দুল কাদের বঙ্গভবনের বাসিন্দা হলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিভিন্ন দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালনেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি পদে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নাম।
সংসদীয় গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে যাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করবে, তিনিই সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাবেন বঙ্গভবনে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কোনো সঙ্কট তৈরি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিনি সঙ্কট থেকে উত্তরণে অবস্থান নিতে পারবেন, তেমন কেউই রাষ্ট্রপ্রধানের পদে বসবেন। এ সমস্ত কিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিবেচনাতেও ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ ওবায়দুল কাদের সবার থেকে এগিয়ে।
কালের আলো/এমএএএমকে