বিজিবি ডিজির চেয়ারে মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান, সীমান্তরক্ষী বাহিনী পৌঁছবে নতুন উচ্চতায়

প্রকাশিতঃ 11:05 pm | January 29, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) থেকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি)। প্রায় ৭ মাস আনসারের গুরুদায়িত্ব সামাল দেওয়ার পর তিনি পেয়েছেন আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। নতুন বছরের শুরুতে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানকে।

দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে নিখুঁতভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফলতার পরিচয় দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রাখেন এই দুই তারকা জেনারেলের ওপর। বিজিবি মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ১২ দিনের মাথায় রোববার (২৯ জানুয়ারি) অপরাহ্নে বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নিকট থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয় সরকার। তিনি প্রায় ১১ মাস দক্ষতার সঙ্গেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বিজিবির নতুন ডিজি মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানের সেনা পরিমণ্ডলে একজন দক্ষ, চৌকস ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম রয়েছে। সরকার যখনই তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেখানেই তিনি নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বের মিশেলে এবার তিনি নেতৃত্ব দিবেন বীরত্ব আর শৃঙ্খলার প্রতীক আধা-সামরিক বাহিনী বিজিবিকে।

সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে রোজকার সময় দায়িত্ব পালন করে আসা গৌরবোজ্জ্বল এই বাহিনী দেশের মানুষের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। নতুন ডিজির নেতৃত্বে অতীতের ধারাবাহিকতায় সাফল্যের স্বর্ণালী পালক যুক্ত করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি, এমন প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের। তাদের আশাবাদী ভাষ্য হচ্ছে-অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুসংগঠিত ও পেশাদার এই বাহিনীটি হবে গর্বিত অংশীদার।

নতুন ডিজির বর্ণাঢ্য জীবন
মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৬৯ সালের ২ জানুয়ারি। ১৫ জুলাই ১৯৮৬ সালে ১৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে তিনি যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএসসি) ডিগ্রি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস) ডিগ্রি অর্জন করেন। মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে ‘আর্মি স্টাফ কোর্স এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)’ সম্পন্ন করেন তিনি।

বিজিবি সদর দপ্তর জানায়, মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান স্কুল অফ ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস এ জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-৩ (প্রশিক্ষণ), একটি কম্পোজিট ব্রিগেডের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডজুট্যান্ট অ্যান্ড কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল এবং আর্মি হেডকোয়ার্টার্সে ডেপুটি প্রভোস্ট মার্শালের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এ কর্নেল জেনারেল স্টাফ, কুমিল্লা, ডিটাচমেন্ট কমান্ডার, ঢাকা এবং ডিজিএফআই সদর দপ্তরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি রিজিয়নে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি মিলিটারি পুলিশ ইউনিট এবং একটি পদাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) এবং বগুড়া এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট কোর্স, মালেশিয়ায় অনুষ্ঠিত পিসকিপিং অপারেশন সেমিনার, চীনে অনুষ্ঠিত ৪র্থ ইন্টারঅ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়া কনফারেন্সে ইন্টেলিজেন্স ব্রিফিং-এ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ এবং মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত ‘লার্নিং এক্সচেঞ্জ অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে বসনিয়া হার্জিগোভিনার বিহাচ পকেট প্লাটুন কমান্ডার এবং ২০১০ সালে সুদানের (দারফুরের) নিয়ালাতে সেক্টর রিজার্ভ কমান্ডিং অফিসার হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, শিক্ষা সফর, ভ্রমন এবং পবিত্র হজ্জব্রত পালন উপলক্ষ্যে বিশ্বের ১৯টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি একজন ভালো বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও গলফ খেলার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ রয়েছে। মনোয়ারা বেগম তাঁর সহধর্মিণী। তিনি এক কন্যা সন্তানের গর্বিত বাবা।

কালের আলো/এমএএএমকে