অত্যাধুনিক মিসাইল যুগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বহি:শত্রুর আক্রমণ রুখে দিতে আরও আত্মবিশ্বাসী সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 9:44 pm | January 31, 2023

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

উন্নয়ন অবকাঠামোয় প্রতিনিয়ত দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে লাল-সবুজের চিত্রপটে আঁকা বাংলাদেশ। দূরদৃষ্টি ও তীক্ষ বুদ্ধিমত্তায় অবিচল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুমাত্রিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে প্রতিরক্ষা নীতি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজন করে চলেছেন আধুনিক সমর সরঞ্জাম। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী সামরিক সক্ষমতা তৈরিতে তুরস্ক থেকে কিনেছেন টাইগার মাল্টিপল লঞ্চ রকেট মিসাইল সিস্টেম (এমএলআরএস)।

মাত্র ৪ মিনিটে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রটির মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের টেকনাফের শিলখালী ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ফায়ারিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সশরীরে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীতে নব সংযোজিত টাইগার এমএলআরএস’র যৌথ জাহাজীকরণোত্তর ও স্থানীয় প্রশিক্ষণোত্তর ফায়ারিং অবলোকন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মিসাইল যুগে প্রবেশের মাধ্যমে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। মিসাইল লঞ্চারগুলো একই সঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

বহি:শত্রুর আক্রমণ রুখে দিতে মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বিশেষ দিনটিতে চাকচিক্যে মোড়ানো আলোক ঝলকানো উৎসব নয় একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনীকে সক্ষমতার নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণীত ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নে পদে পদে সাফল্যের চিহ্ন রেখে নিজেদের টেকসই আভিযানিক সক্ষমতার মূলমন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে উজ্জীবিত করেছেন সেনা সদস্যদের। গতিশীল নেতৃত্বের দক্ষতায় নতুন সম্ভাবনায়
আলোর দিশা ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেকের চোখে।

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগত দক্ষতার উৎকর্ষতা সাধন ও যুগোপযোগী আধুনিকায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় প্রণীত ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে ১২০ কিলোমিটার রেঞ্জের ক্ষমতা সম্পন্ন টাইগার এমএলআরএস’র ফায়ারিং অনুষ্ঠিত হলো। যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি)। ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ১১ টার ঘর পেরিয়েছে। সবার চোখ শিলখালী ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে। চলছে সেনাবহরে যুক্ত নতুন টাইগার মিসাইল সিস্টেমের সফল ফায়ারিং। বিকট শব্দে টিউব থেকে ছুটে যাচ্ছে মিসাইল। মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার রেঞ্চে গিয়ে আঘাত হানছে। মিনিট দশেক পরই টিউব থেকে ছোড়া হয় দ্বিতীয় মিসাইল। সাগরের সামনে বিশাল বালিয়াড়িতে রাখা ৩০ টন ওজনের ট্রাক ও রকেট লঞ্চার। যার উপর রয়েছে দু’টি টিউব। প্রতিটি টিউবে লোড করা হয়েছে টাইগার এমএলআরএস। কয়েক দফার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘন্টাব্যাপী এ সফল ফায়ারিং কার্যক্রম চলে।

ফোর্সেস গোল অর্জনে আধুনিকায়নের অগ্রযাত্রায় সেনাবাহিনী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘প্রতিরক্ষা নীতি’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এ ‘প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করেন। এরপর থেকেই ফোর্সেস গোল বাস্তবায়নে পুরোদমে মনোনিবেশ করে সরকার। লক্ষ্যপূরণে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শক্তিশালী ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। আশার কথা হচ্ছে-সামরিক শক্তি-সামর্থ্যরে দিক থেকে গত বছরের তুলনায় ৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

সেনাবাহিনীতে নব সংযোজিত টাইগার এমএলআরএস’র যৌথ জাহাজীকরণোত্তর ও স্থানীয় প্রশিক্ষণোত্তর ফায়ারিং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বলেছেন, ‘আমাদের ফোর্সেস গোল অর্জনের জন্য এটি আমাদের সক্ষমতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো। আমরা আধুনিকায়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেলাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমরা যে অর্জনের মাধ্যমে এই পর্যন্ত এসেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা পরের ধাপেও পৌঁছাতে পারবো। আমাদের ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর সঠিক বাস্তবায়ন ইনশাআল্লাহ আমরা সঠিক সময়েই করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ফোর্সেস গোল-২০৩০ অ্যাপ্রুভ করেছেন। এটি বাস্তবায়নের জন্য যত প্রকার রিসোর্স ও সহযোগিতা দরকার হচ্ছে সেটি আমরা পাচ্ছি। আজকে মিসাইলযুগে প্রবেশ করাতে সেনাবাহিনীর মনোবল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু সেনাবাহিনী নয় সামরিক বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধিতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যেমন বাংলাদেশ নেভিতে যখন সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে তখন আমাদের তখন আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। সামরিক সক্ষমতা যখন বাড়ে তখন সামরিক বাহিনীর যেকোন কারও কাছে সেটি ভালো লাগে। বাংলাদেশের জনগণ দে অলসো প্রাউড অব দেয়ার মিলিটারি। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ওই সক্ষমতার জায়গায় দেখতে চায় যেখানে আমরা আমাদের প্রদত্ত দায়িত্ব অর্থাৎ মাতৃভূমিকে সঠিকভাবে বহি:শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবো।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক প্রমুখ।

কালের আলো/এমএএএমকে