‘আমি একজন মেয়র, আমাকে বাঁচান’

প্রকাশিতঃ 12:31 pm | October 05, 2017

ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরমেয়র মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামানকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে পাওয়া গেছে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান দুজন গ্রামপুলিশ।

মেয়রের বরাত দিয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার জানান, তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি কালো মাইক্রোবাসে করে এনে এখানে নামিয়ে দেয়া হয়।

গ্রামপুলিশ অশোক কানু ওই মেয়রকে প্রথম দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘তখন সাড়ে ১২টা থেকে ১টা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের গেটের সামনে দাঁড়ানো একজনকে দেখতেছি। দেখে ভদ্রলোকই মনে হচ্ছিল। তবে পায়ে জুতা ছিল না। পরনে কালো পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। ‘কোথায়, কার কাছে যাবেন’ জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু বললেন না। একসময় আমার হাত ধরে বললেন, ‘আমি একজন মেয়র, আমাকে বাঁচান।’ আমি তার কথা শুনে হেসে দিয়েছিলাম।”

অশোক জানান, গতকাল পত্রিকায় এক নিখোঁজ মেয়রের ছাপানো ছবির সঙ্গে চেহারার মিল পেয়ে তারা রুকুনুজ্জামানকে ধীরে ধীরে হাঁটিয়ে ইউপি ভবনে সচিবের কক্ষে নিয়ে পাখার নিচে বসান। পানি পান করান। মেয়রের কথামতো তার মাথায় পানিও ঢালেন তারা। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান সেখানে ছিলেন না। ইউপি সচিব ঘটনাটি চেয়ারম্যান, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানান। এরপর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশশেরুল ইসলাম ও শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এম নজরুল সেখানে আসেন। ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালাও খবর পেয়ে দ্রুত চলে আসেন। বেলা দেড়টার দিকে উদ্ধার হওয়া মেয়র রুকুনুজ্জামানকে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কালীঘাট ইউপির সচিব মিন্নাত আলী বলেন, ‘‘উনি (মেয়র) খুব ভয় পাচ্ছিলেন। অফিসে ঢোকার সময় হাঁটতে পারছিলেন না। বলছিলেন, ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। আমরা তাকে বলি, এখানে আর কোনো সমস্যা হবে না। পত্রিকার সংবাদ ও ছবি দেখালে উনি নিজেই বলেন ‘এটা আমার ছবি।’।

কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, ‘‘ওনার কথাবার্তা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। খুব ভয় পাইছিলেন। বেশি কথাবার্তা বলতে পারছিলেন না। উনি বলেছেন গাড়িতে যখন ছিলেন তার চোখ বাঁধা ছিল।’’

ওই মেয়রের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত সোমবার সকালে ঢাকার উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে তিনি হাঁটার জন্য বের হন। তখন তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয় কিছু লোক। মাইক্রোবাসে তোলার পরপর তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। তিনি অপহরণকারীদের কাউকে চিনতে পারেননি। এরপর গতকাল শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট ইউপি কার্যালয়ের সামনে তাকে কালো একটি মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, থানায় নেয়ার পর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়র অভিযোগ করেছেন, তাকে মারধর করা হয়েছে। উদ্ধারের পর তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে অসংলগ্ন উত্তর দিচ্ছেন। তার কাছে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টরেলের ওষুধ ছিল। তিনি ওষুধ খেয়েছেন।”

মেয়র রুকুনুজ্জামানকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রুকুনুজ্জামান একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিন বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং এই দল থেকে প্রার্থী হয়ে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তার পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউসের ব্যবসা আছে।