মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মসিকের নতুন যুগের সূচনা
প্রকাশিতঃ 9:59 am | February 16, 2023
অনিক খান,কালের আলো:
বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান আশ্রয়স্থল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল এলাকাতেই আবার ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে সেখানে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫০ টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এতে করে নগরীজুড়ে মেডিকেল বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মেডিকেল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের মাধ্যমে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে স্থানীয় শম্ভুগঞ্জের চর ঈশ্বরদিয়া ডাম্পিং স্টেশনে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’র ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু।
সূত্র জানায়, এই প্ল্যান্টে পরিবেশসম্মত আধুনিক পন্থায় উচ্চ তাপমাত্রায় ধোঁয়াবিহীন চুল্লির মাধ্যমে বর্জ্য বিশোধন করা হবে। এতে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে। প্ল্যান্টটিতে ইনসিনারেটর, অটোক্লেভ ও ইটিপিসহ নানাবিধ সুবিধা থাকবে। মূলত এর মাধ্যমে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগের সূচনা করেছে মসিক। ফলে সংগৃহীত মেডিক্যাল বর্জ্যের কারণে যে সংক্রামক রোগ ছড়ায় তাও অনেকাংশেই কমে আসবে।
একই সূত্র জানায়, নগরীর চর ঈশ্বরদিয়া ডাম্পিং স্টেশনে মসিকের দেওয়া এক একর জায়গায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করছে প্রিজম ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সম্প্রতি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ প্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহ সিটি এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫০ টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে ক্যাটাগরি ভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ করে তার ব্যবস্থাপনা করবে। মূলত চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধি-২০০৮ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) বিধিমালার মৌলিক বিষয়সমূহ অনুসরণ করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হবে মেডিকেল বর্জ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, মেডিকেল বর্জ্যের ধরণ অনুযায়ী প্রথমে সংগৃহীত বর্জ্য আলাদা করবে শ্রমিকরা। পরে অটোক্লেভিং, ইনসিনারেশন, ডিপ বারিয়াল ও রিসাইক্লিং ও ইটিপি প্রক্রিয়ায় চলবে পরিশোধন কার্যক্রম। মেডিকেলে ব্যবহৃত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, সংগৃহীত নমুনা বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পরিশোধন করা হয় ইনসিনারেশন প্রক্রিয়ায়। এ পদ্ধতিতে দুই চেম্বার বিশিষ্ট ইনসিনারেটরের সাহায্যে ভষ্মীভূত করা হবে।ইনসিনারেটরে প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কেজি মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানো সম্ভব হবে। জৈব বর্জ্য পুড়িয়ে ছাইয়ে পরিণত করা হবে, পরে তা মাটিচাপা দেওয়া হবে।
বিশ্বের উন্নত শহরগুলোকে অনুসরণ করে সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য নিষ্কাশনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মসিক মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু। জনবান্ধব এ নগর সেবক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বরাবরই যুগোপযোগী ভাবনা চিন্তার সমন্বয়ে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে ময়মনসিংহকে গড়ে তোলতে প্রয়াস নিয়েছেন। এজন্যই তিনি পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘মেডিকেল বর্জ্য সাধারণ বর্জ্য থেকেও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সিটির নাগরিকরা অধিক সুরক্ষিত থাকবে।’
একই সূত্র জানায়, বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও ইতিবাচক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। ময়মনসিংহ সিটির বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিন সিটি ময়মনসিংহ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন মেয়র। ক্লিন সিটি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ১, ২, ৩, ৫, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭ এবং ১৯ টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এছাড়াও মানববর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য এর ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
কালের আলো/একে/এমএএএমকে