চওড়া হাসি মিরপুরবাসীর মুখে; ঢাকাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 12:31 pm | February 19, 2023
কালের আলো রিপোর্ট:
আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি মেগা সিটি ঢাকাকেও স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের অঙ্গীকার করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র্য ও চমৎকার সবুজে ভরা একটি দেশ। ফুল, ফল, পাখির অত্যন্ত সৌন্দর্য্যে ভরা এই দেশটিকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলব। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ব এবং ঢাকা সিটিও স্মার্ট সিটি হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেজন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর মিরপুরে ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধন করে স্থানীয় কালশী বালুর মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিমও অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন। সুধী সমাবেশে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
১ হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে মিরপুরের সঙ্গে বনানী, উত্তরা এবং রাজধানীর পূর্বাংশের যোগাযোগ আরও সহজ হবে বলে আশা করছে সরকার। বাসস জানায়, ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর কালশী বালুর মাঠে একটি জনসভার অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত হারুন মোল্লার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ঘোষণা দেন, কালশী ফ্লাইওভারের নাম হবে হারুন মোল্লার নামে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশকে আজ উন্নত করতে পেরেছি। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি এবং এই মর্যাদাকে ধরে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মেয়র আতিকের গান, উচ্ছ্বাস-করতালি শেখ হাসিনার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভালো সংযোগ না থাকা এ শহরের ‘প্রধান সমস্যা’। তার সরকার রাজধানীর এই অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসিবি স্কয়ার থেকে ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার কালশী ফ্লাইওভার এবং ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ছয় লেইনের রাস্তা মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, মানিকদি, মাটিকাটা, ভাষানটেক, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দরে যোগাযোগ সহজ করবে। মেট্রোরেলের পর কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেইনের সড়ক চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে।’
ঢাকা উত্তর সিটির উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুল ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১১ সালে ঢাকা শহরকে দুই ভাগ করার পর গত ১২ বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত কয়েক বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর সৌন্দর্যায়ন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ফুটপাথ নির্মাণ ও উন্নয়ন, সড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভারের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে।’ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কালশী বালুর মাঠকে একটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন, যেখানে শিশু ও তরুণদের জন্য খেলার মাঠ এবং বয়স্কদের চলাচলের জন্য হাঁটার পথ থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালশী ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় কয়েক কোটি মানুষের ব্যস্ত নগরীর মিরপুরের সঙ্গে বিমানবন্দর, উত্তরা, অন্যদিকে বাড্ডা, বনানী ও মহাখালীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। কমে আসবে দূরত্ব। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে মিরপুর থেকে বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় মিরপুর সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, সেনাবাহিনীর আবাসন, অনেক শিক্ষা ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। মিরপুরের যাতায়াত সহজ করতে আগেই নতুন সড়ক ও সেনানিবাস এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে মিরপুরে যাতায়াতে সড়কটির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। তবে কালশী মোড়ে সরু থাকায় সেখানে প্রায় যানজট হতো। এখন ওই পথ দৈনিক এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাতে পারবে।
প্রকল্প বিবরণী অনুযায়ী, ফ্লাইওভারটি ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো। এই প্রকল্পে যাত্রীদের ভ্রমণ সহজ করার লক্ষ্যে আগের চার লেন বিশিষ্ট রাস্তাগুলোকে ছয়লেন করা হয়েছে। প্রধান চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি ইসিবি স্কোয়ার থেকে কালশী ও মিরপুরের ডিওএইচএস হয়ে গেছে। দুইলেন বিশিষ্ট র্যাম্পটি কালশী মোড় থেকে শুরু হয়ে কালশী সড়কে যাবে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনোয়ারুল ইসলাম সরদার কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য আজ যে স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিচ্ছেন তা দেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আপনার সর্বস্ব দিয়ে এই জাতিকে ঋণী করেছেন বারবার।
আজ আবার আপনি নতুন দায়ে আমাদের আবদ্ধ করলেন। আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা, প্রশ্নাতীত আনুগত্য ও প্রাণঢালা ভালোবাসা আপনার জন্য চিরকাল অটুট থাকবে। আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে ও সম্মানিত সেনাপ্রধানের দিকনির্দেশনায় দেশ গঠনমূলক কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা আজ সর্বজনবিদিত। সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই ব্রিগেড দেশের ১৭ টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করে চলেছে।’ অনুষ্ঠানে কালশী ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রকল্পের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।
কালের আলো/পিএম/এনএল