নবজাতক অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

প্রকাশিতঃ 5:26 pm | March 04, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

এক সপ্তাহ বয়সী নবজাতককে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করা মো. রুবেল শেখ ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজকে গ্রেফতার করেছেন র‍্যাব।

র‍্যাব জানিয়েছে, শিশু অপহরণ করে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এই দম্পতি। আর মুক্তিপণ না মিললে নবজাতককে খুলনার রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।

শনিবার (০৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই অপহরণকারী এই ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, উদ্ধার হওয়ার নবজাতকের মায়ের নাম মিলি আক্তার। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন মিলি।

মিলির পূর্বপরিচত অপহরণকারী রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়া। ঢুলিভিটা বাজারের পাশেই ভাড়া থাকেন এ দম্পতি। গ্রেফতার রুবেল ফুফু বলে ডাকতেন মিলিকে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফুটফুটে এক ছেলের জন্ম দেন মিলি। ২৬ ফেব্রুয়ারি মিলির ছেলেকে দেখতে বাসায় আসেন রুবেল ও তানিয়া। তখনও ওই নবজাতকের নার রাখা হয়নি। তানিয়ার কাছে ৭ দিনের নবজাতককে রেখে ওষুধ কিনতে যান মিলি। এই সুযোগে রুবেল-তানিয়া দম্পতি নবজাতককে নিয়ে পালিয়ে যান। ২০ মিনিট পর মিলি ফিরে এলে তার নবজাতকসহ তাদের ঘরে পাননি।

সারারাত আশপাশের বিভিন্ন স্থানে তাদের সন্ধান করেন ভুক্তভোগী মা মিলি। পরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে মিলিকে ফোন করে জানানো হয়, সন্তানকে ফিরে পেতে হলে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নয় তো নবজাতককে মেরে ফেলা হবে। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী মিলি র‌্যাবের কাছে অভিযোগ জানান৷

গোয়েন্দা সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে যশোরের অভয়নগর এলাকায় অভিযানে চালিয়ে ওই নবজাতককে উদ্ধারসহ দুই অপহরণকারী মো. রুবেল শেখ ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার রুবেল জানায়, ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মিলির নবজাতক অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করে তারা। নবজাতককে নিয়ে পালিয়ে এ দম্পতি ধামরাই থেকে প্রথমে বাস যোগে খুলনায় যায়। সেখানে আত্মগোপনের জন্য রূপসা নদীর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠে। তারা বিভিন্নভাবে শিশুর মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই মধ্যে নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপনে যাবে।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার রুবেল খুলনার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। জীবিকার তাগিদে ৭/৮ বছর আগে ঢাকায় আসেন। তিনি পেশায় একজন গামেন্টর্সকর্মী পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। রুবেল এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন বলে জানা যায়।

এছাড়াও, স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, তিনি এর আগে ধর্ষণ চেষ্টা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে গ্রেফতার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। গত ৩ বছর আগে গ্রেফতার পরিবারের অমতে তানিয়াকে বিয়ে করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন রুবেল।

কালের আলো/ডিএস/এমএম