চোখ ধাঁধানো সমাপনী শেখ কামাল যুব গেমসের, ভবিষ্যত তারকার মঞ্চে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠত্ব
প্রকাশিতঃ 1:33 am | March 05, 2023
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
‘বুকে হাত রেখে, বিজয়ের বেশে, ছুঁয়ে দেব আসমান’ স্লোগান নিয়ে প্রায় দু’মাস আগে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) আয়োজনে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর। এই বছরের ২ জানুয়ারি প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, টেকনিক্যাল অফিসিয়াল ও ক্রীড়া সংগঠকের অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বারের মতো পর্দা উঠে ‘শেখ কামাল বাংলাদেশ যুব গেমস’র। শনিবার (০৪ মার্চ) বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শেষ হয়েছে দেশের বৃহৎ এই ক্রীড়া মহাযজ্ঞ।
ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের গতির ঝলক, আতশবাজির রোশনি, মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর চোখ ধাঁধানো সমাপনী এই নগরীকে দিয়ে গেলো চলতি বছরের যুব গেমসের বিদায়ী বার্তা। যুব তারুণ্যের মনে বুনে দিয়ে গেলো নতুন স্বপ্নের বীজ। চূড়ান্তপর্বে ৪ হাজার অ্যাথলেটের ক্রীড়াশৈলীতে টানা সাত দিন ক্রীড়াঙ্গনে আনন্দের ফল্গুধারায় পুরোমাত্রায় ছিল উৎসবের আবহ। শনিবার (০৪ মার্চ) রাতে সেই উৎসবের দাড়ি টানলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সুন্দরভাবে গেমস শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ‘এই প্রজন্মের তরুণরাও খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা ও ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে আগামীতে হয়ে উঠবে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ’-সমাপনী ঘোষণায় আশাবাদী উচ্চারণ শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস’র এই কো-চেয়ারম্যানের।
এর আগে প্রায় তিন ঘন্টার সমাপনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সেনাবাহিনী প্রধান ও বিওএ সভাপতি জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় সেনাপ্রধানের স্ত্রী নুরজাহান আহমেদ, চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভবিষ্যত তারকার মঞ্চে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠত্ব
শেখ কামাল যুব গেমস মূলত ভবিষ্যত তারকার মঞ্চ। খেলোয়াড় সন্ধানের গেমস হলেও দিন শেষে পদকের লড়াইটাও গুরুত্বপূর্ণ। চূড়ান্ত পর্বের প্রথম চার দিন খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে শীর্ষস্থান দখলের ত্রিমুখী লড়াই ছিল। শেষ দু’দিন লড়াইটা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে। শনিবার (০৪ মার্চ) শেষ দিনে উশু এবং অ্যাথলেটিকস’এ স্বর্ণ জিতে ঢাকা বিভাগকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসে প্রথম হয়েছে চট্টগ্রাম। এই গেমসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার পদক সংখ্যা ৪৯টি। তিনটি স্বর্ণ কম নিয়ে ঢাকা বিভাগের অবস্থান দ্বিতীয়। তিনটি স্বর্ণে ঢাকা পিছিয়ে থাকলেও এই দুই বিভাগের মোট পদক সমান ১৪৬।
২৪টি ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত গেমসে ৪২টি স্বর্ণ, ৪৩টি রৌপ্য এবং ৫৯টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৪টি পদক নিয়ে তৃতীয় হয়েছে খুলনা বিভাগ। সমাপনী অনুষ্ঠানটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র আগমন, অ্যাথলেটিকস’র ১০০ ও ৮০০ মিটার দৌড় ইভেন্ট, শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন, স্পন্সরদের ক্রেস্ট প্রদান, প্রধান অতিথির বক্তব্য ও সমাপনী ঘোষণা।
দ্বিতীয় পর্বকে সাজানো হয় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যেখানে সুরের তালে সবাইকে মাতিয়েছেন শিল্পীরা। অ্যাথলেটিকস’র জনপ্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সময় তরুণ-তরুণীদের গতির সঙ্গে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের গর্জনে ভিন্ন এক আবহ তৈরী হয়। স্প্রিন্টের পর ছিল ২৫ মিনিটের বিরতি। এরপর শুরু হয় সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতা।
শুরুতে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের ওপরে সংক্ষিপ্ত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তুলে ধরা হয়, জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে গেমসের মশাল প্রজ্বলন। এরপর যুব গেমসের স্পন্সরদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন বিওএ সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানের পর ৮০০ মিটার এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টের তরুণ ও তরুণী বিভাগে পদক জয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে যুব গেমসের সেরা হওয়া চট্টগ্রাম ও দ্বিতীয় হওয়া ঢাকা বিভাগের হাতে ট্রফি তুলে দেন বিওএ সভাপতি।
বঙ্গবন্ধু খেলাধুলার জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ
সমাপনী বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেলাধুলার জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন ও আধুনিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। সে সময় একে একে গড়ে ওঠে সাঁতার, হকি, ভলিবল, অ্যাথলেটিকস্, টেনিস ইত্যাদি ফেডারেশন। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য এবং নতুন প্রতিভার সমন্বয়ে আমরা জাতীয় দলগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পারব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক ও তারুণ্যের প্রতীক। তাঁর যৌবন দীপ্ত ক্রীড়াশৈলী দেশের তরুণদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। এই প্রজন্মের তরুণরাও খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা ও ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে আগামীতে হয়ে উঠবে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ।’
‘বর্তমান সরকার ক্রীড়াঙ্গনের সম্প্রসারণ এবং খেলাধুলার মান উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং করে যাচ্ছে। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে তরুণ প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা যাতে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়, সেজন্য দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নারীরা সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল, সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ এবং সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি কাজাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস্ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ইমরানুর রহমান ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের সাথে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে’- যোগ করেন বিওএ সভাপতি।
পরে সেনাপ্রধান এবারের যুব গেমসে সেরা ২৮ জন তরুণ-তরুণীকে ১০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই আতশবাজির আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো আর্মি স্টেডিয়াম।
কালের আলো/এমএএএমকে