পুলিশে বিতর্কমুক্ত আরও একটি কনস্টেবল নিয়োগ, বিদায় তদবির-বাণিজ্যের সংস্কৃতির!

প্রকাশিতঃ 11:41 am | March 21, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

শৈশব থেকে নিত্যসঙ্গী অভাব-অনটন। অতি দারিদ্র‍্যতা আর নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই। তবুও পুলিশে চাকরির স্বপ্ন ছিল মো.সজীবের। টাকা ছাড়া চাকরি নেই-এই ভাবনায় ছেলেকে আবেদনই করতে দিতে চাননি দিনমজুর বাবা আব্দুস সালাম। কিন্তু বরগুনা জেলায় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে দারিদ্র‍্যের অন্ধকার ঘরে জন্ম নেওয়া এই তরুণ। মিলেছে কনস্টেবল পদে চাকরি।

বিনা ঘুষ বা তদবিরে সরকারি চাকরি! বিষয়টি বেশ অবিশ্বাস্যই মনে হয়েছিল খুলনার বটিয়াঘাটার ইজিবাইক চালকের কন্যা তমালিকা মিস্ত্রীর। শৈশব থেকেই দারিদ্র‍্যের কষাঘাতে জর্জর। পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবার জোগাড়ে তাঁর বাবা যখন যে কাজ পেয়েছেন, করেছেন। অন্ধকার জীবনে বেড়েছে আঁধারের গাঢ়তা। জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত বাবা বিকাশ মিস্ত্রী মেয়ের চাকরিতেও যেন ঘোরের মধ্যেই ছিলেন! মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতেই সন্তানের চাকরিতে পূরণ হয়েছে তাঁর স্বপ্ন।

সজীব বা তমালিকার পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে ঘুষ দিয়ে পুলিশে নিয়োগ পাওয়ার দিন শেষ হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও দেশের ৬৪ জেলাতেই সাড়ে ৫ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। যেখানে নিয়োগ হচ্ছে কোনো রকম তদবির বা অর্থছাড়াই। কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া সাধারণ পরিবারের সদস্যদের অনেকেই দিনমজুর, কৃষক, রিকশাচালক বা ইজিবাইক চালকের সন্তান। গর্বিত পুলিশ সদস্য হিসেবে আত্নপ্রকাশ ওদের কষ্টের জীবনে এনেছে স্বস্তির নি:শ্বাস।

সূত্র জানায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম আর ঘুষ লেনদেনের টুঁটি চেপে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর নির্দেশনায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পুরোপুরি অনিয়ম ও দুর্নীতির দুয়ার বন্ধ করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ উপহার দিতে শুরু থেকেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তদবির-বাণিজ্য ঠেকাতে তিনি পুলিশের সব রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেন। এতে করে এবারও উপেক্ষিত থেকেছে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি, আমলা ও প্রভাবশালীদের তদবির।

জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান কালের আলোকে বলেন, ‘শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্যেই কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগের আগেই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে দালাল ও অসাধু চক্রের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার না হতে চাকরিপ্রত্যাশীদের নানাভাবেই পরামর্শ দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ দিতে মাননীয় আইজিপি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন। ফলে মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে পুলিশে।’

সূত্র জানায়, পুলিশে চাকরি পেতে টাকার প্রয়োজন নেই এমন বার্তায় স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করতে নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সিরিজ আলোচনা সভা ও বৈঠক করেন কনস্টেবল নিয়োগের অধিকর্তা জেলা পুলিশ সুপাররা (এসপি)। অনেক জেলায় পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনা হয়। সব রকমের প্রতারণা ঠেকানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় এক বছর পর এবারও বিতর্কমুক্ত সাড়ে ৫ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া পুলিশ সদর দপ্তরের ‘টিম ওয়ার্ক’র ফসল বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) হায়দার আলী খান কালের আলোকে বলেন, ‘কোন রকম তদবির ছাড়া মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ হচ্ছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু নিয়োগ সম্ভব হয়েছে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান কালের আলোকে জানান, ইতোমধ্যেই অর্ধেকেরও বেশি জেলায় স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ হয়েছে। বাদ বাকী জেলাগুলোতেও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শুধু মেধা আর যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্তরা সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে নিজ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে কার্যকর অবদান রাখবেন বলে আমরা আশাবাদী।’

কড়া নজরদারি, ৬৪ জেলায় বিশেষ টিম
সূত্র জানায়, পুরোপুরি বিতর্কমুক্ত আরও একটি কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে আইজিপির বিশেষ মনিটরিং সেলের সদস্যরা সক্রিয় ছিলেন। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া মাত্রই গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। নজরদারিতে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট, রেঞ্জ ডিআইজির নজরদারি কমিটি, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন পুলিশ সুপার (এসপি) ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে গঠিত ৬৪টি বিশেষ টিম। নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিমগুলো দেশের ৬৪ জেলায় সফর করে। পাশাপাশি পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়। এসবই গরিব ও মেধাবীদের চাকরি নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ কালের আলোকে বলেন, ‘পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার), পিপিএম স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল নিয়োগে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ সদরদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে রেঞ্জ ডিআইজি অফিস ও এসপি অফিস থেকেও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। আমরা চেষ্টা করেছি দেশের ৬৪ টি জেলায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। আমাদের এই চেষ্টা স্বার্থক হয়েছে।’

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯০৯ ও ২০১৯ সালে ৯ হাজার ৬২৮ জন কনস্টেবল নিয়োগে সফলতা পেয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। ওই নিয়োগের সময় তিনি কঠোর ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনও প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন। তদবিরের সঙ্গে জড়িত পুুলিশসহ অন্তত ৪০ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালে আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এর সময়েও নতুন নিয়মে মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে যোগ্যদেরই কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি নিয়োগেরই প্রশংসা করেছেন।

এবারের নিয়োগের বিষয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হক কালের আলোকে বলেন, ‘স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যরাই কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। কোনো প্রার্থীর পক্ষে তদবির করলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আগাম হুঁশিয়ারি দেওয়ার ফলে তদবিরবাজরা সাহস করেনি। মেধা যার চাকরি তার- এই নীতি বাস্তবায়িত হওয়ায় এই নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বেড়েছে, উজ্জ্বল হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তিও।’

কী বলছেন কনস্টেবল নিয়োগের অধিকর্তারা
মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে কতটুকু স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল নিয়োগ উপহার দিতে পারেন এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা ছিল কনস্টেবল নিয়োগের অধিকর্তা ৬৪ জেলার এসপিদের মধ্যে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন’র নির্দেশে দুর্নীতির কলঙ্ক কালিমামুক্ত নিয়োগ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।

ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ৪৬০ জনের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, এখন মেডিকেল চলছে এমনটি জানিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান কালের আলোকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ স্মার্ট পুলিশিং’র সোপান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গতবারও পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নির্দেশে সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবারও কনস্টেবল নিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।’

ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে কোনো প্রকার ঘুষ, সুপারিশ ও হয়রানি ছাড়া খুলনার ৮৮ জন নিয়োগপ্রত্যাশী চাকরি পেয়েছেন। পুলিশে চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই। কোন চাপ, তদবির আর দুর্নীতিবাজ প্রতারক চক্রের বলয় ছিন্ন করে গত দু’বারের মতো এবারও একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য নানামুখী তৎপরতা চালান খুলনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান।

জানতে চাইলে তিনি কালের আলোকে বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলাম। এ বিষয়ে মাননীয় আইজিপির কঠোর নির্দেশনা ছিল। সবার আন্তরিক সহযোগিতায় একটি বিতর্কমুক্ত নিয়োগ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি।’

সিলেট জেলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে ১৩১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ১১১ জন পুরুষ এবং ২০ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা আগামীতে দেশ সেবায় ও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিবেন। স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে একটি আধুনিক, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষ, সাহসী ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সক্ষম জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।’

মাদারীপুরে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ৪৫ জন প্রার্থী। এমন সুযোগে খুশিতে আত্মহারা সদ্য চাকরি পাওয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। ঘুষ ছাড়া সন্তানদের চাকরি হওয়ায় খুশি অভিভাবকেরাও। কোনো দালাল কিংবা প্রতারক নয়, শতভাগ যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম।

ফেনীতে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ফেনীর ৫৫ জন। নিয়োগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হাসান বলেন, ‘পুলিশ সুপার হিসেবে এটি আমার জন্য প্রথম নিয়োগ কার্যক্রম, যা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ জনবল নিশ্চিত করতে পেরেছি।’

কুমিল্লায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ২০৬ জন। চাকরিপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই অতিদরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। কুমিল্লায় পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ‘স্মার্ট পুলিশ তৈরি করার জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সহযোগিতায় স্বচ্ছভাবে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ঘুস ছাড়া যেহেতু সবার চাকরি হয়েছে তাই তারা সৎভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমি মনে করি।’

পুলিশে চাকরি পেয়েছেন বাগেরহাটের ৫৬ জন। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘আমরা খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কাউকে কোনো অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো রাজনৈতিক সুপারিশ বা চাপ ছিল না। মেধাবী এবং শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের আমরা চাকরি দিয়েছি। আশা করি, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা পুলিশ বিভাগ ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে।’

সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নড়াইলে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ২৭ জন। পুলিশ সুপার (এসপি) মোসা. সাদিরা খাতুন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থা বিনির্মাণের প্রত্যয়ে বিদ্যমান কনস্টেবল পদে নিয়োগ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। যেসব প্রার্থী প্রতিটি পরীক্ষায় নিজ নিজ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন, শুধুমাত্র তারাই নিয়োগযোগ্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।’

কুষ্টিয়াতে ট্রেইনিং রিক্রুট কনস্টেবল (টি আরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৭৪ জন। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম বলেন, ‘যোগ্যতায় যাদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।’

চাঁদপুরে কোন তদবির কিংবা ঘুস বাণিজ্য ছাড়া কেবল শারীরিকভাবে ফিট, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে ৯৩ প্রার্থীর। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিলন মাহমুদ বলেন, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে একটি যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে এই নিয়োগ অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নিয়োগপ্রাপ্তদের সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, গড়ে উঠবে স্মার্ট পুলিশ।’

ময়মনসিংহে ১৯৫ প্রার্থী পেয়েছেন পুলিশে চাকরি। আলোকের ঝর্ণধারায় উদ্ভাসিত হয়েছেন তাঁরা। আবেগ ধরে রাখতে না পেরে আনন্দে কেঁদেছেন অনেকে। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করতে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। আমি জেলার ১৪ টি থানায় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিট পুলিশিং সভা করেছি। সব জায়গায় আমি প্রকাশ্যে বলেছি শতভাগ মেধা ও যোগ্যতায় নিয়োগ হবে। এখানে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করবে।’

সম্পূর্ণ মেধার গরিমায় ও যোগ্যতায় শেরপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৫২ জন। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগকে অনুকরণীয় এক উদাহরণ বলে মনে করেন শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো.কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘তদবির বা সুপারিশে পুলিশে চাকরি হয় না। এই কথাটি আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের কঠোর নির্দেশনায় একটি অসাধারণ নিয়োগ উপহার দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নিয়োগপ্রাপ্তরা ‘সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব সঙ্গে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করবেন।’

একইভাবে গাজীপুরেও তদবির ও ঘুস ছাড়াই পুলিশের চাকুরি পেয়েছেন ১২৯ জন। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম জানান, ‘শুধুমাত্র যোগ্যতার মাধ্যমে সরকারি ফি দিয়ে মেধাবীরা বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কারণে তারা অভুতপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন দেশ সেবার। দেশপ্রেম, সততা, পেশাদারিত্ব ও সেবার মনোভাব নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দায়িত্ব পালনে কাজ করবে বলে আমি আশা করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে