পুণ্যকর্মগুলোকে রাখি জীবন্ত
প্রকাশিতঃ 11:06 am | April 20, 2023
মাহমুদ আহমদ:
আল্লাহপাকের অপার কৃপায় আজ নাজাতের দশকের অষ্টম দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। মাহে রমজান শেষ প্রান্তে। আমাদের উচিত হবে রমজানের পুণ্যকর্মগুলো বছর জুড়ে জীবন্ত রাখা। আমরা কেউ বলতে পারিনা যে আগামী বছরের রোজা রাখার সৌভাগ্য লাভ করবো। কে কখন আল্লাহপাকের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন কেউ বলতে পারিনা।
কেননা পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যাকে মৃত্যু স্পর্শ করবে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘কুল্লু নাফসিন জায়কাতুল মাউত’ অর্থ্যৎ ‘প্রত্যেক আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫)
মানুষ যেমন নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি, তেমনি নিজের ইচ্ছায় সে এ পৃথিবী ছেড়ে যেতেও পারে না। তাকে অবশ্যই আল্লাহতায়ালার অমোঘ নিয়তির নির্দেশ মানতে হবে। কিন্তু মানুষ ইচ্ছে করলে মৃত্যকে জয় করতে পারে। মানুষ চায়লে বেঁচে থাকতে পারে শত শত বছর ধরে। আর শত শত বছর বেঁচে থাকার জন্য তার প্রয়োজন হবে এমন কিছু কর্ম করে পৃথিবীতে রেখে যাওয়া যেগুলোর ধ্বংস বা বিলয় নেই। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, পৃথিবীতে মহামানবেরা যে অনন্ত জীবন লাভ করেছেন তাদের সেই পরিচয়ের মূলে রয়েছে তাদের কর্ম ও সৃষ্টি। মানুষের জন্য যারা কাজ করেন তারাই অমরত্ব লাভ করেন। রমজানের এই দিনগুলোতে আমরা অনেক পুণ্যকর্ম করেছি, সেগুলোকে আমাদের জীবনের স্থায়ী রূপ দান করতে হবে। যদি আমরা এমনটি করি তাহলেই এই রমজান আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হবে।
আমরা দেখতে পাই, সেই আদিম ও গুহাবাসী পর্যায় থেকে মানুষ যে বর্তমান উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে তারও মূলে রয়েছে মানুষের কর্মসাফল্য। অনেকেই মনে করেন, স্মরণীয় কীর্তি সবাই রেখে যেতে পারে না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য অনাহার-অর্ধাহারের মধ্যে যাদের দিন কাটে তাদের পক্ষে যুগান্তকারী কোনো কিছু সৃষ্টি সম্ভব নয়। আসলে এ ধারণা সর্বাংশে সত্য নয়। মানুষ যুগ যুগ বেঁচে থাকবে তার কর্মের ফলে এমন কর্ম সমাজ থেকে মনে হয় উঠেই গেছে।
আজ কারো কর্মের জন্য কেউ বেঁচে থাকে না। কারণ বর্তমানে এমন লোক পাওয়া খুবই কষ্টকর যারা নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করেন। আজ আমরা সবাই নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করি। মৃত্যুর পরও আমাদেরকে সবাই স্মরণ করুক এটা আমরা চাই না। এতো এতো অর্থ সম্পদ রোজগার করছি কিন্তু পাশের ঘরের লোকটি যে না খেয়ে আছে তার খোঁজ পর্যন্ত রাখছি না। রমজানের দিনগুলোতে যদিও কিছুটা খেয়াল রাখি, বছরের বাকি দিনগুলোতে তা করি না।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তিন রকমের আমল ব্যতীত সব রকমের আমলই বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমতঃ সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয়তঃ জনহিতকর শিক্ষা, তৃতীয়তঃ এমন সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে’ (মুসলিম)।
সদকায়ে জারিয়া যার অর্থ এমন ধরনের জনহিতকর কাজ যার সুফল বহু দিন পর্যন্ত চলকে থাকে। মানবতার উপকারার্থে যেমন- পুকুর কাটা, কুপ খনন করা বা পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করা, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা তৈরি করা, রাস্তার পাশে ছায়াদানকারী বৃক্ষ রোপণ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করে যাওয়া এবং এমন জ্ঞানমূলক কোনো পুস্তক রচনা করা যার মাধ্যমে লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করবে। তেমনভাবে মৃতব্যক্তি যদি কাউকে সুশিক্ষা দিয়ে যায় তার ফলেও সে প্রতিদান পেতে থাকবে।
তৃতীয় যে কাজটির জন্য সে প্রতিদান পেতে থাকবে তা হল তার নেক সন্তান, যাকে সে প্রথম থেকেই সুশিক্ষা প্রদান করেছে এবং তার চেষ্টার ফলেই সে খোদাভীরু ও দীনদার হতে পেরেছেন। যতদিন পর্যন্ত এমন নেক সন্তান দুনিয়ায় জীবিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত তার কৃত সৎকাজের ছওয়াব সেও পেতে থাকবে।
আমাদের ভাবা উচিত, আমরা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কি রেখে যাচ্ছি? আমরাতো শুধু নিজের অহংকার আর আভিজাত্য নিয়েই ব্যস্ত, পরকালের কোন চিন্তাই করি না। আমাদেরকে এমন কিছু করে যেতে হবে যাতে মরে অমর হতে পারি।
হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে এমন কোন কর্ম করার তৌফিক দান করুন যার মাধ্যমে আমরা বেঁচে থাকব অনন্তর।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।