নতুন অধ্যায়েও সফলতার ‘উদাহরণ’ হবেন নতুন মহামান্য

প্রকাশিতঃ 9:13 pm | April 27, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মাঠের রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। সংগ্রামমুখর ছাত্ররাজনীতি দিয়ে তাঁর শুরু। কর্মজীবনে ছিলেন বিচারক এবং দুদক কমিশনার। দায়িত্ব পালন করেছেন পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে। রণাঙ্গনে পাকিদের হটিয়েছেন। এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রের অভিভাবকের এই দায়িত্বও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে চান। তিনি নিজেও বলেছেন ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করব। সংবিধানে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, তা আমি যথাযথভাবে পালন করব।’

আগামী ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ তাদের সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার কথা বলে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দলগুলোর বিরোধ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এই পটভূমিতে নতুন রাষ্ট্রপতি কী ভূমিকা নেন, সেদিকে অনেকের নজর থাকবে। সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে তিনি ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রত্যাশাও আছে বহু মানুষের।

পাশাপাশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলও মনে করেন, নতুন মহামান্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর দীর্ঘ ২৭ বছর সিনিয়র জেলা জজ হিসেবে বর্ণীল ক্যারিয়ারে পক্ষপাতের কোন অভিযোগ নেই। একেবারেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের অনুকরণীয় উদাহরণ তৈরি করেছেন। সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ উচ্চারণ করা নতুন রাষ্ট্রপতি নতুন অধ্যায়েও সফল হবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন। সংবিধানকে রক্ষা করতে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। এসব সাক্ষাতেও নির্বাচনের বিষয়টি উঠে এসেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি-উর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। আর নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেশের সব নাগরিকের অভিভাবক। সে হিসেবে তার চাপ তো একটু রয়েছেই। তার দীর্ঘ জীবনের কাজের অভিজ্ঞতা বলে, তিনি এই দায়িত্বপালনের জন্য শতভাগ যোগ্য।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাদের অভিভাবক। একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা মনে করি নতুন রাষ্ট্রপতি অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন।’

সংবিধানের সর্বোচ্চ পদধারী নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বিএনপির নানা আপত্তি থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করে, রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করবেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রত্যাশা, দেশ ও দশের মঙ্গল হয় এমন কিছুই আসবে রাষ্ট্রপতির হাত ধরে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাষ্ট্রপতিকেই দেখেছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে দেশ যেন ভাল থাকে, দেশ যেন সংবিধান অনুযায়ী চলে। গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে যেন হাসি ফোটে, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছেন। এর বাইরে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই।’

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, সংবিধানের প্রতি মর্যাদা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবেন তিনি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন বিচারক ও সময়ের সাহসী সন্তান তিনি। দেশের মানুষের, বাঙালি জাতি ও বাঙালি জাতি সত্তার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন। বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং দৃঢ় বিশ্বাস বিশ্বাস।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপি বিশ্বকে অবাক করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতি সম্মান জানানো, তাকে মর্যাদা দেওয়া, তার জায়গাটা সমুন্নত রাখতে যারা চায় না, তারা কি চায়? তাদের লক্ষ্য কি? তাদের উদ্দেশ্য কি? দেশবাসী, বিশ্ববাসী অবাক হয়েছে এদের এই কথাবার্তায়।

বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন। এটা তো পাগলের প্রলাপের মতো। পাগলের প্রলাপ ছাড়া তারা আর কিছুই বলে না। তারা দেশবিরোধী অপশক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাঙালি জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তি, সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারা সবচাইতে বড় অন্তরায়।

রাষ্ট্রপতির প্রতি প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানকে ধারণ করবেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করবেন।

কালের আলো/এমএএএমকে