উত্তাপ ছাড়াই ফলপ্রসু বাফুফের সভা, সোহাগ কাণ্ডে তদন্তের মেয়াদ বাড়লো ৩০ দিন

প্রকাশিতঃ 9:35 pm | May 02, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সবার দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মঙ্গলবারের (২ মে) নির্বাহী কমিটির সভার দিকেই। বিশেষ করে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ইস্যুতে গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে আরও দু’সদস্য পদত্যাগ করতে পারেন এমন গুঞ্জণ গত ক’দিন ছড়িয়েছিল ডালপালা। কিন্তু শেষতক কেউ পদত্যাগ করেনি। মহল বিশেষের সব প্রয়াসই ব্যর্থ হয়েছে।

কমিটি থেকে আগেই পদত্যাগী বাফুফের দুই সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন মহি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তবে কেন তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন, তার জবাব চেয়েছেন নির্বাহী কমিটির অনেকেই। এ সময়ও তারা ব্যক্তিগত বিষয়টিকেই ফোকাস করেছেন।

একই সঙ্গে আলোচিত এই সভায় তদন্ত কমিটি প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে প্রথম সভা থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সময় নিয়েছেন। নির্বাহী কমিটির সভায় তাদের আরও ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ভেতরেই বাফুফের মঙ্গলবারের (২ মে) সভাটি উত্তাপ না ছড়ালেও রীতিমতো ফলপ্রসু হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, এদিন দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া সভা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ইস্যুতে গঠিত তদন্ত কমিটিই ছিল সেই সভার মূল আকর্ষণ। এই সভায় বাদ বাকি সদস্যদের নিয়েই তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপিকে আহবায়ক করে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছিল। দুই সদস্য পদত্যাগ করলেও, বাকিদের নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের আশাবাদ এই সহ-সভাপতির, ‘আমাদের কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ। তাদের নিয়ে আমরা শিগগির কাজ শুরু করবো।’

ফিফা ২০১৭-২০ সাল পর্যন্ত বাফুফের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে তদন্ত করেছে। এই তদন্ত কমিটির আওতাধীন সময় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেন আহবায়ক কাজী নাবিল। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম সভা করে একটি রূপরেখা করব। প্রথম সভার পরই আমাদের কর্মপদ্ধতি ও নানা বিষয় অবহিত করা হবে।’

বাফুফের অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে। তাদের দায়িত্বে রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত নেবো কোন প্রক্রিয়ায় তদন্ত হবে। তদন্তের আগে কাউকে দোষী করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না। তবে প্রয়োজনে আমরা কয়েকজনকে কাজ থেকে সরিয়ে রাখতে পারি। এসবই সিদ্ধান্ত হবে কমিটির প্রথম সভায়।’

নিজেদের ওপরই আস্থা রাখতে চান বাফুফে সভাপতি
বাফুফের বাইরের ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে তদন্তের কথা উঠলেও নিজেদের ওপরই আস্থা রাখতে চান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘কাজী নাবিল একজন সংসদ সদস্য। তার উপর আস্থা রাখাই যায়।’ আগামী সপ্তাহ থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি। এ সময় বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘ফিফা যে তদন্ত করেছে সেখানে আর কি কি আছে, কোনও জায়গায় কেউ ভুল করেছে কিনা, তা জানতে আমাদের আরও ৩০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যখন তিনি তদন্ত রিপোর্ট দেবেন, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তদন্ত কমিটির স্বাধীনতা আছে।’

এই সময় স্বাধীন বা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির বিষয়ে এক গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন করলে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বাফুফে সভাপতি।

কী জানালেন বাফুফে সহসভাপতি সালাম মূর্শেদী
সভায় এক সময়কার নন্দিত ফুটবলার ও বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদীও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। স্বভাবসুলভ ধীর স্থির কন্ঠে খুলনা-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কনভেনার কাজী নাবিল সাহেব ও তার টিম কার্যক্রম শুরু করবে সেখান থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি রিপোর্ট প্রদান করবেন। এই সুযোগ বা সময় ওনি চেয়েছেন। আমরা আজকে নির্বাহী কমিটির সভায় সেটি অনুমোদন করেছি।’

সূত্র জানায়, এই সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচিত তিন জেলা ক্রীড়া সংগঠক। তাদের ওপর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের পদত্যাগের চাপ রয়েছে। এরপরও তারা এ সভায় স্বাভাবিকভাবেই অংশগ্রহণ করেছেন এবং পদত্যাগের বিষয়টি ফুৎকারেই উড়িয়ে দিয়েছেন।

কমলাপুর ও মতিঝিলে নতুন টার্ফ পাচ্ছে বাফুফে
কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মতিঝিলের বাফুফে ভবন সংলগ্ন মাঠের দুটি টার্ফই পুরনো হয়ে গেছে। এই দুই মাঠে নতুন টার্ফ বসতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা শেষে এমনটি জানান সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। তিনি জানান ফিফা থেকে নতুন বরাদ্দ পাওয়ার কথাও।

বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের ফিফা ফরোয়ার্ড প্রোগ্রাম আছে। সে প্রোগ্রামে আগে একটা ফান্ড ছিল আমাদের কক্সবাজারে ট্রেনিং সেন্টার তৈরির জন্য। এর সঙ্গে আরেকটি নতুন একটা ফান্ড যোগ হয়েছে। আগেরটা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। কারণ, এখানে একটা প্রক্রিয়া আছে। ওই প্রজেক্টের শর্তই হলো জমি আমাদের হতে হবে। অনেক দিন ধরে আমরা জমির পেছনে দৌড়াচ্ছিলাম। আমরা কক্সবাজারে জমি পেয়েছি। এখন যে কাজটি বাকি আছে, সেটা হলো ওই জমির ওপর ডিজাইন করতে হবে। ওই ডিজাইন ফিফাকে পাঠাবো। ফিফা অনুমোদন দিলে আমাদের কাজ আরম্ভ হবে। সে জন্য আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ওপেন টেন্ডারে যাওয়ার।’

নতুন ফান্ড প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘ফিফা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে, কমলাপুর ও বাফুফে ভবন সংলগ্ন টার্ফ- এ দুইটার বয়স প্রায় ৯-১০ বছর হয়ে গেছে। আপনারা সবাই জানেন যে, টার্ফের অবস্থাও ভালো না। এখানে আমাদের দুইটা নতুন টার্ফ বসানোর সম্ভাবনা আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আমাদের যে লিজের চুক্তি আছে সেটা কমপক্ষে ১০ বছর থাকতে হবে। এখন আমাদের চুক্তির মেয়াদ আরো ৯ বছর আছে। এর সঙ্গে দুই বছর যোগ হলে আমরা ফিফায় আবেদন করতে পারবো। তখন দুইটা টার্ফ আমরা পরিবর্তন করতে পারবো।’

টার্ফ বসানোর জন্য নতুন এই প্রজেক্টের জন্য বাফুফে পাবে আরো ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগে কক্সবাজারে ট্রেনিং সেন্টার তৈরি জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩.৬২ মিলিয়ন ডলার। কমলাপুর ও বাফুফে ভবনের টার্ফের জন্য ৩ মিলিয়ন ডলারের পুরোটা খরচ না হলে বাকি অর্থ যোগ হবে কক্সবাজারের খুনিয়াপালংয়ে ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজে।

কালের আলো/এমকে/জিকেএম