ডিবি পুলিশের কব্জায় ৫২ মাদক ব্যবসায়ী, ময়মনসিংহে মাদকের মহোৎসবে ভাটা!
প্রকাশিতঃ 9:51 am | February 03, 2018
রাইসুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিবেদক | কালের আলো :
অপরাধ দমনে হার্ডলাইনে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে আত্নগোপন করেছেন নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। সাঁড়াশি অভিযানে তছনছ হয়ে গেছে ‘মাদক জোন’ হিসেবে পরিচিত এলাকাসমূহ। দিন-রাত যেসব পয়েন্টে প্রকাশ্যে মাদক বিকিকিনির মহোৎসব চলতো এখন সেখানে বহমান নীরবতা।
মাদক বিরোধী জোরদার অভিযানে গত এক মাসে রীতিমতো চমক দেখিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে সাফল্য পেয়েছে চৌকষ গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের জালে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন ৫২ মাদক ব্যবসায়ী।
মাদক ও অপরাধ দমনে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এমন সাফল্য জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ক্রমশ নাগরিক বাসিন্দাদের প্রশংসা ও আস্থা কুড়াচ্ছে জেলা পুলিশের এ বিশেষায়িত টিম। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন।
গত বছরের ৫ জুলাই এ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব দেন নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার সন্তান আশিকুর রহমানকে। কর্মে বীর, চিন্তায় ধীর চৌকষ এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নগরীকে মাদকমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করেন।
দিন-রাত সমানতালে কাজ করে নিজের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ক্লুলেস অপরাধের রহস্য ভেদ, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে চিরুনি অভিযান, মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের দুর্গে হানা দিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক তছনছ করে দিয়েছেন তরুণ এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সূত্র মতে, নগরীর ছোট-বড় ৫২ মাদক ব্যবসায়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কব্জায় আসায় নগরীর ‘মাদক জোন’ হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে মাদক বিকিকিনিতে ভাটা পড়েছে। অনেক এলাকা হয়ে পড়েছে মাদকশুন্য। আত্নগোপন করেছেন মাদক কারবারি করে কোটিপতি বনে যাওয়া একাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
অনেকে আবার স্বপরিবারে লাপাত্তা। তাদের বাসা-বাড়িতেও ঝুলছে তালা। মাদক বিরোধী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এমন সাঁড়াশি অভিযান চুপসে দিয়েছে মাদক বাণিজ্যের রাঘব-বোয়ালদের।
অবশ্য নগরী পুরোপুরি মাদকমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশনায় পরিচালিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ৫২ মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ২৬১ পিস ইয়াবা, ৮৭৩ গ্রাম হেরোইন, ১০ বোতল ফেন্সিডিল, ২০ বোতল ভারতীয় মদ ও ৫ কেজি ২’শ গ্রাম গাঁজা।
স্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও হৃদকম্পন থামিয়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও ২ রাউন্ড গুলিসহ পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছেন শীর্ষ এক সন্ত্রাসীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নাঈম নামে ছিনতাইকারীদের ‘গ্যাং লিডার’ নিহত হবার পর শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও।
এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হয়েছে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র। জঙ্গিবাদ দমনেও সোচ্চার জেলা পুলিশের এ ইউনিট উদ্ধার করেছে বিভিন্ন জিহাদী বই। একই সময়ে গ্রেফতার হয়েছে দুধর্ষ ৩ ডাকাত ও দুই অটো রিকশা চোর।
অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ রেঞ্জে একবার ও জেলা পুলিশে একবার শ্রেষ্ঠ ওসি’র স্বীকৃতি পেয়েছেন তরুণ ও উদ্যমী আশিকুর রহমান। রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে কৃতিত্বের সঙ্গে মাষ্টার্স পাস করেন।
মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে চমক দেখানো এ পুলিশ কর্মকর্তা দৈনিক কালের আলোকে বলেন, অপরাধ ও মাদককে জিরো টলারেন্সে আনতে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীরা যে দলেরই হোক কোন ছাড় নেই। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতেই চলমান এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/এসসি