৩১৫ চরমপন্থী স্বাভাবিক জীবনে, আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 9:56 pm | May 21, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
স্বাভাবিক মুক্ত জীবনে ফিরলেন ৩১৫ চরমপন্থী। আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র তুলে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে। মন্ত্রী আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সব মামলা পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের আওতায় কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন।
রোববার (২১ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ ঘটলো ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেন থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে।
এ সময় আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির (জনযুদ্ধ) সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও বগুড়া জেলার ৩১৫ জন চরমপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ২১৬টি অস্ত্র জমা দেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, তানভীর শাকিল জয় এমপি, ডা. আব্দুল আজিজ, মেরিনা জাহান কবিতা, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি, অপারেশনস) কর্নেল মাহাবুব আলম, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, র্যাব-১২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মামলা বিশেষ পর্যালোচনা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে র্যাবের কার্যক্রম দেশ-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘উদয়ের পথে’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে চরমপন্থী পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে র্যাব সফলতা দেখিয়েছে। একসময় এই সাত জেলা চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য ছিল। প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, গুম, খুন, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটত। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থী দলের শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সদস্য। এরপর ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় পুলিশের কাছে ৫৯৬ জন চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।’
তিনি বলেন, আজ যাঁরা র্যাবের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা বিশেষ পর্যালোচনা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যাঁরাই আত্মসমর্পণ করবেন, সবাইকে সরকারের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এখনো যাঁরা আত্মসমর্পণ না করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন, তাঁরা বিপদগ্রস্ত হবেন। আপনারা চর এলাকাসহ যেখানেই অবস্থান করেন না কেন, র্যাব আপনাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। কারণ, র্যাব এখন অনেক প্রশিক্ষিত, অনেক আধুনিক।’

অন্ধকার থেকে আলোর পথে
আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী দলের নেতা রাজু আহমেদ (সিরাজগঞ্জ) বলেন, ‘পথভ্রষ্ট হয়ে এত দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেছি। আমাদের পুনর্বাসন করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমাদানের উদ্যোগে আমরা রাজি হয়েছি। শ্রমিকের কাজ করে হলেও আমরা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সেখানে আমাদের জড়ানো হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, সেগুলো থেকে মুক্তি চাই।’
টাঙ্গাইলের চরমপন্থী দলের নেতা রুজবেল বলেন, ‘ফেরারি জীবন আর ভালো লাগে না। আদর্শের নামে এত দিন আমরা ভুল পথে ছিলাম। অন্ধকারের পথ থেকে আমরা আলোর পথে ফিরতে চাই।’
কালের আলো/জিকেএম/এমকে