বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতিত্ব সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 9:05 pm | May 29, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সব কৃতিত্ব দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীদের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বশান্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বাত্নক পৃষ্ঠপোষকতা, যা আমাদের সকলের জন্য সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণার মূল উৎস।’

সোমবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করায় পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ শান্তিরক্ষী হিসেবে আমি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করছি। তাই শুরুতে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি এবং সেই সাথে এই বিরল সুযোগ প্রদান করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের কাতারে নেতৃত্ব দিচ্ছে
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আপনারই সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং নিরলস সহায়তায় অর্জিত হয়েছে’ বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের কাতারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এই উন্নয়ন ও অর্জন কোনদিনই সম্ভব হতো না, যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। তাই আজকের এই বিশেষ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মূল রূপকার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।’

‘যার আজীবন সংগ্রাম এবং অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ, একটি মানচিত্র ও একটি গর্বিত পরিচয় পেয়েছি। এখন সেই পরিচয়ের পদচিহ্ন আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছি বিশ্বময় শান্তির পতাকা হাতে। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি বিশেষ শ্রদ্ধা জানাতে চাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সকল শহীদদের প্রতি। তাদের সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি তাদের পরিবারের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা’- যোগ করেন সেনাপ্রধান।

বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টার চেতনা বিনির্মাণ
জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের নৈতিক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা তার প্রণীত সংবিধান আমাদের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টার চেতনা বিনির্মাণ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৮৮ সাল থেকে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী ১৯৮৯ থেকে এবং বাংলাদেশ নৌ ও বিমানবাহিনী ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

এটি অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের বিষয় যে আজ বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি স্বীকৃত নাম এবং শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সম্মানিত স্থানে অধিষ্ঠিত। বর্তমানে বিশ্বে ১২টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ হাজার ৪৩ জন, নৌবাহিনীর ৩৫৯ জন, বিমান বাহিনীর ৫২২ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ৫১২ জনসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি আমাদের নারী শান্তিরক্ষী অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২ হাজার ৭২৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। এবং এই মুহূর্তে ৫৭২ জন নারী সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন।’

প্রিয় মাতৃভূমির মর্যাদা বিশ্বদরবারে বহুলাংশে বৃদ্ধি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘বিশ্বশান্তি রক্ষায় আমাদের অর্জন আমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, মানবাধিকারের প্রতি যত্নশীলতা এবং সর্বোপরি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা প্রতিফলন। এর পাশাপাশি আমাদের শান্তিরক্ষীদের উন্নত নৈতিক মূল্যবোধ নিরপেক্ষ মনোভাব নিরাপত্তা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন ইত্যাদি পার্থক্য তৈরী মানবিক গুণাবলী জাতিসংঘ পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত। যা আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির মর্যাদা বিশ্বদরবারে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছেন। এই বিশেষ অর্জনের জন্য আমাদের অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সেনাবাহিনীর ১৩১ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন, বিমানবাহিনীর ৯ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ২৩ জনসহ সর্বমোট ১৬৭ জন সদস্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৫৯ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় পবিত্র দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫ জন জীবন উৎসর্গ করায় গত ২৫ মে জাতিসংঘ কর্তৃক তাদের ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করা হয়েছে।’

শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আরও চ্যালেঞ্জিং
সমসাময়িক সময়ে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের ধরন উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ শান্তিরক্ষী জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বহুমাত্রিক সংঘাতের ঝুঁকির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ দুর্গম আভিযানিক এলাকায় এবং দু:সহ আবহাওয়ায় আমাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে এ সকল চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমাদের শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরঞ্জামাদির মানোন্নয়ন পাশাপাশি প্রশিক্ষণকে আরো আধুনিক ও অর্থবহ করা হয়েছে। ফলে আমাদের শান্তিরক্ষীরা এখন যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।’

কালের আলো/এমএএএমকে