পেটিকোটে ইয়াবা পাচার: নারী সিন্ডিকেটের সন্ধানে ডিএনসি

প্রকাশিতঃ 4:58 pm | June 08, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পেটিকোটে বিশেষভাবে সেলাই করে এবং ট্রাকের স্পেয়ার চাকায় অভিনব কায়দায় লুকিয়ে ইয়াবা পাচারকালে মো. আলমগীর ও মো. শাহজাহান দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। তবে ওই চক্রের কয়েকজন নারী সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।
 
বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁয়ে অধিদফরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (উত্তর) সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। এসময় বক্তব্য দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) উপ পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান।
 
এসময় তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল (বুধবার) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানাধীন ২৩/৬/১ গোপীবাগস্থ নাহার কিচেন ডিলিসিয়াস ফুড নামীয় দোকানের পূর্ব পার্শ্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ১০ হাজার ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ী ঈদগাহ কবরস্থান এলাকায় অভিযান করে ১৫ হাজার ইয়াবাসহ অপর একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

dm

গ্রেফতারকৃত মো. আলমগীর (৪০) পেশায় ট্রাক চালক আর মো. শাহজাহানের (২৬) পেশা মাদক কারবার। তিনি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ইয়াবা সরবরাহের মূল সমন্বয়ক। শুধু তাই নয়, শাহজাহান টেকনাফ এর বিভিন্ন ইয়াবা কারবারিদের সাথে যোগাযোগ করে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকা জেলার হেমায়েতপুরে তার নিজ ভাড়া বাসায় মজুত করে থাকেন। পরবর্তীতে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মাদক কারবারিদের কাছে ইয়াবা পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেন। 
 
এছাড়া পণ্য পরিবহনের আড়ালে শাহজাহান চক্রের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিতো ট্রাক চালক আলমগীর। টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে টেকনাফের বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে ট্রাক চালক আলমগীরের সখ্যতা তৈরি করে। টেকনাফের বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন জেলায় ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ায় ছিল তার মূল কাজ। এ কাজের জন্য প্রতি ট্রিপে সে ১ থেকে ২ লাখ টাকা পেত।
 
চক্রটিকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল উত্তরাঞ্চলের কয়েকজন মাদক কারবারি ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থানকৃত শাহজাহানের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা শাহজাহানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি এবং তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হই। বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা জানতে পারি যে, শাহজাহান টেকনাফ থেকে ইয়াবার একটি চালান ট্রাক চালক আলমগীরের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।
 
সেই তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ হতে ট্রাক চালক আলমগীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে যাত্রাবাড়ী এলাকার গোপীবাগে ট্রাকটির গতি রোধ করি এবং তাকে শনাক্ত করি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ট্রাকের স্পেয়ার চাকার টিউবের মধ্যে বিশেষভাবে লুকানো অবস্থায় বিপুল ইয়াবা রয়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে স্পেয়ার চাকার টিউবের মধ্যে হতে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
 
অপরদিকে ট্রাক চালক আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদে শাহজাহান সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্য এবং পূর্বের প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন হেমায়েতপুর, জয়নাবাড়ী, ঈদগাহ কবরস্থান এলাকায় শাহজাহানের ভাড়াকৃত বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বিশেষ কায়দায় পেটিকোটে সেলাই করা অবস্থায় বিভিন্ন মাদক কারবারির কাছে সরবরাহের জন্য মজুদ ১৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ উদ্ধার করা হয়।ি

dm

জিজ্ঞাসাবাদে শাহজাহান জানায়, মহিলাদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচারের সুবিধার জন্য এ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে থাকে। প্রাথমিকভাবে আসামি শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তার নামে ইতোপূর্বেও দুইটি মাদক মামলা রয়েছে।
 
সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান আরও বলেন, গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) মোতাবেক সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) কর্তৃক ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) উপ পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ওই চক্রের মূলহোতারা মহিলাদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করছে। তাই মহিলা সদস্যদের গ্রেফতারে মাঠে অভিযান চলছে।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি