দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন অক্টোবরে
প্রকাশিতঃ 6:46 pm | June 27, 2023
কালের আলো রিপোর্ট :
সিলিংয়ে সোনালি-ক্রিম রঙের চোখধাঁধানো কারুকাজ। মেঝেতে বাহারি টাইলস। চারপাশের নীল কাচে শেষ বিকেলের আলো ঠিকরে পড়ে তৈরি করছে মোহনীয় এক চিত্রপট। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের ভেতরকার অনিন্দ্যসুন্দর এমন দৃশ্য নজর কাড়ে। দেশের অন্যতম এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে কাজ। প্রকল্প এলাকায় চলছে দিন-রাত কর্মযজ্ঞ। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৭৭ দশমিক ৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আসছে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। ওই সময় থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং (আংশিক উদ্বোধন) হবে।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান।
তিনি বলেন, আশা করছি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সফট ওপেনিং করা হবে। আমরা অক্টোবরের আগে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করতে চাই। আশা করি, সময়ের আগে কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবর মাসে সফট উদ্বোধন হলেও এই টার্মিনাল পুরোপুরি ফাংশনাল (কর্মক্ষম) হবে ২০২৪ সালে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সব থেকে দ্রুততম সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধনের (সফট ওপেনিং)। এই জন্য প্রকল্প এলাকায় দিন রাত কাজ চলছে। আপনারা জানেন আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ছুটিতেও আমাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। আমাদের এখানে ৩ থেকে ৪ হাজার শ্রমিক ছুটিতেও কাজ করে যাবেন। তাদের শুধু ঈদের দিন ছুটি দেওয়া হয়েছে, এরপরের দিন থেকে তারা আবার কাজ শুরু করবেন।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পাচ্ছে না বিমান
থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পাচ্ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এমন গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। এ লক্ষ্যে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও জানা গিয়েছিল। সেদিকে ইঙ্গিত করে এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এই বিমানবন্দর নিয়ে প্রত্যাশা কিন্তু অনেক বেশি। সরকারের কাছে, আমাদের কাছে। যে আমরা একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর এখানে তৈরি করতে যাচ্ছি।
এখানে ব্যবস্থাপনা থাকবে আন্তর্জাতিক মানের। সরকার এখানে চাচ্ছে অপারেশন এবং মেনটেইনেন্স এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, কার্গো হ্যান্ডেলিং আমাদের একটা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দিয়ে করানোর চেষ্টা করছে। পিপিপির মাধ্যমে তারা কোন কোন টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে কাজটা করবে এ লক্ষ্যে ফিজিবলিটি স্টাডি চলছে। আমরা কি ধরণের সার্ভিস চাই, সার্ভিসের অ্যাগেইনেস্টে কি ধরণের ফিনানশিয়াল কস্ট আসবে- সব কিছুই এই ফিজিবলিটি স্টাডির মধ্যে থাকবে। যদি তখন আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র এই শর্তগুলো মানতে রাজি হয়, তাহলে তারা আমাদের এই সার্ভিসটা প্রদান করবে। এখানে একটা প্রশ্ন থাকে, যে আমাদের তো বিমান আছে, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যেকোনো বিমানবন্দরে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার থাকে না, একাধিক থাকে। এটা চয়েস থাকে, কার কাছ থেকে তারা সার্ভিস নেবে। আশা করছি এর মাধ্যমে আমাদের এখানে একটা পজিটিভ কম্পিটিশন হবে।
বুর্জ খালিফা-টুইন টাওয়ারের নির্মাতারা বানাচ্ছেন থার্ড টার্মিনাল
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে নির্মাণে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন গ্রুপ।
এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। তবে এই টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিং। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।
কালের আলো/এমএএএমকে