গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় প্রসূতিকে খুন
প্রকাশিতঃ 6:23 pm | July 18, 2023
কালের আলো রিপোর্ট:
ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরির সুবাদে মাসুদ মিয়ার সঙ্গে পরিচয় শান্তনার। কিছুদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন দুজনই। এক পর্যায়ে শান্তনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি মাসুদকে জানালে সম্পর্ক ও সন্তানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। অনিশ্চিত এ সম্পর্কে অনাগত সন্তানকে নিয়ে ঘোর অন্ধকারে পড়েন শান্তনা। বিয়ের জন্য মাসুদকে চাপ দিতে থাকেন শান্তনা। এই চাপ থেকে বাঁচতে পরিকল্পনা করে শান্তনা ও নবজাতক সন্তানকে হত্যা করেন মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানাধীন খালাশপীর এলাকায় আখ ক্ষেত থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০ বছর বয়সী নারী ও সদ্য প্রসূত কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গাজীপুরের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মো. মাসুদ মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ৮-১০ বছর ধরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন মাসুদ। ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে একই গার্মেন্টসে শান্তনা চাকরিতে যোগদান করেন। একই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে পরিচয় এবং পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাসুদের তথ্য মতে, ভিকটিম শান্তনা বিবাহিতা এবং স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা।
তিনি বলেন, মাসুদ ও শান্তনার প্রেমের সম্পর্ক গভীর হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা হন। ভিকটিম শান্তনা মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। পরে মাসুদ তার বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে শান্তনাকে ঢাকায় রেখে কিছুদিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে যান। মাসুদের পূর্বের বিবাহের বিষয়টি সম্পর্কে শান্তনা অবগত ছিলেন না।
গত ১২ জুলাই মাসুদের সন্ধানে গ্রামের বাড়ি রংপুরে যায় শান্তনা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মাসুদ বিবাহিত ও তার একটি পুত্র সন্তান আছে। সেখানে শান্তনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিয়ে করার জন্য মাসুদকে চাপ প্রয়োগ করে। তখন মাসুদের প্রথম স্ত্রী ফরিদা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে মাসুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য শান্তনাকে বিবাহ ও কাবিনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ঢাকায় গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করবে বলে আশ্বস্ত করে।
পরদিন ১৩ জুলাই মাসুদের খালা শান্তনাকে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। এক পর্যায়ে মাসুদ শান্তনার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাড়িতে ফেরত আসতে বলেন। শান্তনা গাড়ি থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ড থেকে মাসুদের বাড়িতে যাওয়ার সময় খালাশপীর নামে স্থানে একটি বড় আখ ক্ষেতের পাশে পৌঁছালে মাসুদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আখ ক্ষেতে যায় এবং কৌশলে ভিকটিম শান্তনাকেও আখ খেতে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শান্তনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেছন থেকে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং গলায় ও পেটে পা দিয়ে আঘাত করে। এতে শান্তনার গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং দুজনেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তার মাসুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কালের আলো/ডিএস/এমএম