‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনায় ডিএমপি কমিশনারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করার অপপ্রয়াস!

প্রকাশিতঃ 10:42 pm | July 18, 2023

ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:

ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট। স্বভাবতই ব্যালটে অনিয়মের ঝুঁকি ছিল বেশি। নিরপেক্ষতা প্রমাণের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। চিরাচরিত অনিয়ম শুন্যে নামিয়ে আনতে গুরুদায়িত্ব ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। নির্বাচনের আগে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন সব চ্যালেঞ্জ জয় করে নির্বাচন সুষ্ঠু করার বন্দোবস্ত করার। সোমবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কোথাও কোন জালিয়াতি বা কারচুপির খবর মেলেনি। কেন্দ্র দখলের মতো চিরায়ত চিত্রও অনুপস্থিত।

কিন্তু ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউটিউবার হিরো আলমকে গলা ধাক্কা, মারপিটের ঘটনায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপতৎপরতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এই অপতৎপরতাকে হালে পানি দিতে বাড়বাড়ন্ত কায়দায় অপপ্রয়াস চলছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ইতোমধ্যে মারপিটের এই ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে মত দিয়েছেন।মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও অভিযোগ করে বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস—এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভোটের শেষ পর্যায়ে এমন ঘটনার কী উদ্দেশ্য ছিল, তা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’

ইতোমধ্যেই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ডিএমপি কমিশনারকে টেলিফোনযোগে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতির কথা বলতে গিয়ে বছরখানেক আগে সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেছিলেন, ‘দেশে ভোটের সময় পরিবেশ ভালো থাকে না, কেন্দ্র দখল হয়, ভোট ডাকাতি হয়।’ কিন্তু ঢাকা-১৭ আসনের ভোটে দেখা গেলো এর কোনটিই ঘটেনি। দিনভর আবোল-তাবোল সংলাপে মুখর যারা ছিলেন তারাও বলেননি জাল ভোট বা কেন্দ্র দখলের কথা। ভোটের দিনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি খন্দকার গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে ‘টিম ডিএমপি’ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহারে যেভাবে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ রেখেছেন সেই প্রশংসা না করে ডিএমপি কমিশনার হিরো আলমকে মারপিটের ঘটনায় ভোট সুষ্ঠু করতে পারেননি, তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি বলে অনেকেই তাঁর পদত্যাগের কথা তুলছেন। আর এর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কোন কিছুই ভালো লাগে না’ রোগে আক্রান্তরা নানান কায়দা কানুনে ‘টিম ডিএমপি’র অর্জনকে ম্লান করতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভোটে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও জনরায়েই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

তাদের ভাষ্যমতে- ডিএমপি কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি হুবুহু কথা রেখেছেন। এর স্বপক্ষে বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট ফোকাস করে বলেছেন, ভোট ব্যালট ছিনতাই বা জোর করে ভোট দেওয়ার বহুদিনের অভিযোগ থেকে প্রথমবারের মতো বেরিয়ে এসে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। দিনমান ব্যস্ত গণমাধ্যমও বলেনি ভোটে কারচুপি হয়েছে। হিরো আলমের মারপিটের ঘটনা ভোট কেন্দ্রের বাইরে হয়েছে এবং সেটি ভোট চলার একেবারেই শেষে হয়েছে। তখন ব্যালট বাক্সের সুরক্ষায় ব্যস্ত ছিল পুলিশ। এছাড়া কেন্দ্রে কোন জাল ভোট পড়েনি। ব্যালটে সুষ্ঠু ভোটের নির্দশন রাখতে সক্ষম হয়েছে ইসি। টিম ডিএমপিও অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। এখানে প্রশংসার বদলে সমালোচনা অর্বাচীনদের হীনমন্যতার বহি:প্রকাশ বলে মনে করেন তাঁরা।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ হিরো আলম ইস্যুতে সাফ সাফ জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গেটের বাইরে যখন কে বা কারা হিরো আলমকে মারধর করছে তখন পুলিশ বাইরে যেতে পারবে না, কারণ ব্যালট বাক্স রয়েছে। গোয়েন্দা হিসেবে যারা সেখানে উপস্থিত ছিল তারা দ্রুতেই হাজির হয়েছে। এ সময় আমাদের মধ্যে একজন আহতও হয়েছে।’

অনেকেই বলছেন, হিরো আলমকে মারপিটের ঘটনাটি দু:খজনক এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যদি কেউ বলে ভোট সুষ্ঠু হয়নি তারা প্রমাণপত্র হাজির করুক। মূলত সুষ্ঠু ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই মোটা দাগে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে কুচক্রীরা।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, হামলাকারীরা যে দলেরই হোক কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি থাকলে তাও দেখব। তিনি বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ জন লোকের সামনে কে বা কারা হিরো আলমকে মেরেছে এটা আপনারাও দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। আসলে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা সাতজনকে গ্রেফতার করেছি। আরও জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করব। এ ঘটনার পর আমরা তার অফিসে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তাকে বলেছি মামলা দেওয়ার জন্য।’

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘ঘটনাটি মাত্র তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। ওই সময় পুলিশ ছিল। তারা নিবৃত করার চেষ্টা করেছে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে আমরা শিগগিরই তাদেরও গ্রেফতার করব।’

কালের আলো/ওয়াইএ/এমকে