ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দোষারোপের সংস্কৃতিতে নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি, বছরজুড়ে কার্যক্রম চালাতে গুরুত্ব
প্রকাশিতঃ 8:03 pm | July 20, 2023
কালের আলো রিপোর্ট:
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো গাফিলতি, অজুহাত কিংবা একে অপরকে দোষারোপ যেখানে নিয়ম সেখানে রীতিমতো উল্টোপথে হাঁটলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্নে তিনি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করেননি। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বলেছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর একা করতে পারবে না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান তিনি যেমন জানিয়েছেন তেমনি প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু মোকাবেলায় বছরজুড়ে কার্যক্রম চালাতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি।
ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাফ সাফ বলেছেন, ‘আমরা যদি পরস্পরকে দোষারোপ করি তাহলে কাজ হবে না। গঠনমূলক সমালোচনার জায়গা থেকে আমরা বলতে পারি কোন কোন জায়গায় আরও কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা সেই কাজটি প্রথম থেকেই করছি। মার্চ বা এপ্রিল মাসে আমরা আগাম একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলাম। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছিলাম এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হতে পারে এবং তারা যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই অবহিতকরণটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আমরা আমাদের কাজটুকু করেছি। পাশাপাশি কোন এলাকা থেকে রোগী বেশি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, আমরা সেটা চিহ্নিত করে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠাচ্ছি। তারা যেন দ্রুত সেখানে পদক্ষেপ নেন।’
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে ছায়া সংসদবিষয়ক ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই নিজেকে উপস্থাপন করার পাশাপাশি ইতিবাচক এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে
ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইন তৈরি করা আছে। ডেঙ্গুর গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, আমরা সেটা করছি। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর একা করতে পারবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা অনেক বড় একটা কাজ, তবে যারা মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, তাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। সারা বছর এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বিগত বছরের পরিসংখ্যানগুলো থেকে আমরা দেখতে পাই, ডেঙ্গু কিন্তু সারা বছরই কমবেশি ছিল। শীতকালে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কম থাকে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডেঙ্গুর প্রজনন বেশি হয়। জানুয়ারি মাসেও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল। গত বছর জুলাই মাসে আমাদের রিপোর্টেড কেস ছিল ১ হাজার ৭৭১ জন। এ বছর সেটা অনেক বেড়ে গেছে, গতকাল পর্যন্ত আমরা দেখছি ১৭ হাজার ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায়, আবার এটা কমে যায়। অর্থাৎ প্রতিরোধের কাজটা আমাদের সারা বছর চালিয়ে নিতে হবে।
ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিলে ব্যবস্থা
কোনো হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীকে ফিরিয়ে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি আকার নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মহামারীর একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। সেটার সাথে বর্তমান ডেঙ্গুর অবস্থা যায় না বলেই আমি জানি। তবে এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। আমি এই প্রশ্নটা তাদের কাছেই রাখবো।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি প্রয়োজন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আপনারা দেখেছেন করোনার সময় জরুরি অবস্থা বা লকডাউন যখন ছিল, তখন জনজীবনের কি অবস্থা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন লকডাউন এবং কাজ দুটোই চালাতে হবে। যার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেনি। অনেক অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। জরুরি অবস্থা জারি করার আগে যারা পলিসি তৈরি করেন, তাদের সিদ্ধান্ত আসলেই ভালো হয়।
ডিএনসিসি এবং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে জায়গা না থাকার অজুহাতে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন জানতে চাইলে আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আপনারা আমাকে তথ্য-উপাত্ত দেন, কবে কোন জায়গা থেকে কোন রোগীকে কীভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা এক ঘণ্টা ব্যয় করি হাসপাতালগুলোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য। এটা তথ্য-প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ব্যবস্থার কারণে সম্ভব হয়েছে। ঢাকা শহরে বসে আমি যদি চাই তাহলে টেকনাফ এবং তেতুলিয়ায় কথা বলতে পারি। আমরা প্রতিদিন ফলোআপ করি। আপনারা যে হাসপাতালের কথা বললেন, এখান থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমাকে অনুগ্রহ করে জানান। কবে কোন রোগী, কীভাবে ফেরত গেছে, আমি সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং বিপক্ষে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র বিতার্কিকরা অংশ নেন। নাগরিক সচেতনতাই পারে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে শীর্ষক ছায়া সংসদে বিপক্ষে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা জয়ী হন।
কালের আলো/ডিএস/এমএম