শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের হাত ধরে বিপুল সম্পদের মালিক লেদার মনির

প্রকাশিতঃ 7:07 pm | July 22, 2023

কালের আলো রিপোর্ট :

রাজধানীর লালবাগে জমি ব্যবসায়ী এখলাস হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী লেদার মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক সময়ের ২০ টাকার দিনমজুর মনির এখন চারটি ট্যানারির মালিক। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের হাত ধরে গড়েছেন বিপুল ধনসম্পদ।

ডিবি পুলিশ বলছে, জোরপূর্বক জমি কিনতে না পেরে মনিরের সুনিপুণ পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী এখলাসকে।

হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতা চলে যান মনির। আর মনিরের ম্যানেজার ঝন্টু মোল্লা থাইল্যান্ড চলে যান। গত ২০ জুলাই ঢাকায় পৌঁছালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যবসায়ী হত্যায় ঝন্টুর সম্পৃক্ততা মিলেছে।

শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ‘মনির ব্যবসায়ী এখলাসকে হত্যায় নিজেই ২০ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন। এরমধ্যে হত্যার শুরুতে কিলারদের ১১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সাজিয়েছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে তিনি জঙ্গিদের মতো ‘কাটআউট’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।’

গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, এখলাস খুনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার আগের রাত। সেই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে এখলাস আর ফেরেননি। নিখোঁজের দুদিনের মাথায় কামরাঙ্গীরচর থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এখলাস খুনের পর ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা হয়। এই ঘটনায় পর্যায়ক্রমে মূল পরিকল্পনাকারী মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।’

ছায়া তদন্তকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ ২০ জুলাই থাইল্যান্ড থেকে আকাশ পথে ঢাকায় ফেরত আসার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার করে হত্যায় জড়িত ঝন্টু মোল্লাকে। সেই মূলত কোম্পানি মনিরের ক্যাশিয়ার। বর্তমানে ঝন্টু চারদিনের পুলিশি রিমান্ডে আছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে ডিবির একটি টিম রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এখলাসকে হত্যাকারী আব্দুর রহমান ওরফে রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী মো. এছহাককে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ডিবির অপর দুইটি টিম মাগুরা এবং যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী মনিরকে গ্রেপ্তার করে।

সম্পৃক্ততা এড়াতে যত চেষ্টা
ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত মনিরের কাছ থেকে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, ২২ হাজার টাকা এবং ৫ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার করে। মনিরের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে ডিবি পুলিশ দেখেছে, গত ১৫ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কলকাতায় পালিয়ে যান।

কেন এ হত্যাকাণ্ড
হাজারীবাগ এবং সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমিদস্যূ এবং দালালও বটে। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী এখলাসকে দিয়ে জমি জায়গা দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করিয়েছেন। কামরাঙ্গীরচর থানাধীন সিএস ২২ দাগের একটা বড় জমিতে নিহত এখলাসের ৪০ শতক জায়গা আছে। যার অধিগ্রহণ মূল্য কোটি কোটি টাকা। মনির এই জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে অধিগ্রহণের টাকা গ্রাস করতে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। মনিরের এই চেষ্টা ঠেকাতে এখলাস আদালতে একাধিক মামলাসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। নানা ফন্দি ফিকির করে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানি মনির এখলাসকে হত্যার পথ বেছে নেন।

কে এই মনির
নোয়াখালীর এক দিনমজুর আব্দুর রহিমের ছেলে মনির হোসেন। ৭০ দশকে আব্দুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় ডেইলি লেবারের কাজ করতেন। ১৯৮০-৮২ সালে আব্দুর রহিমের সঙ্গে মনিরও ট্যানারি কারখানায় চামড়ার গায়ের ময়লা পরিষ্কারের কাজ নেন। পরবর্তীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেই কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা শুরু করেন। পাশাপাশি জমি দখল ও ভূমির দালালি করতেন। এভাবেই শূন্য থেকে মনির হয়ে যান চার-পাঁচটি ট্যানারির মালিক। যা থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। ২০০২ সালে সিকদার পেট্রল পাম্পের সামনে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় রুহুল আমিনকে। এই হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন এই লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনির ওরফে মনির হোসেন। ২০১৫ সালে এই মনির ইফতারির আগ মুহূর্তে জসিম ওরফে গুন্ডা জসিমকে হাজারীবাগ বাজারের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন বাহিনীকে দিয়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করান। টাকা এবং প্রভাবশালীদের তদবিরে মনির বিভিন্ন সময় ছাড়া পেয়ে যেতেন। এতে মনির অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলেন জানান ডিবিপ্রধান।

কালের আলো/বিএএ/এমএইচ