পর্যটন শিল্পের নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দেশ

প্রকাশিতঃ 10:16 pm | July 23, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

বাংলাদেশে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই খাতটির উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে দায়িত্ব দেয়। মাত্র সোয়া তিন বছরের মধ্যেই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিদেশি সংস্থা আইপিই গ্লোবাল পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে।

মহাপরিকল্পনায় দেশের ১ হাজার ৫১টি পর্যটন স্পটকে চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নয়ন করা হবে। এসব স্পটের মধ্যে অর্ধশত জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে বড় আকারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ৫০টি স্পটে বড় রকমের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা হবে। প্রথমে ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে আর্কিটেকচারাল প্ল্যান, স্ট্র্যাকচারাল প্ল্যান, ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এবং ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করা হচ্ছে। যেখানে সরকারি বিনিয়োগের দরকার হবে, তা সরকারিভাবে করা হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্যও এখানে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।

পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের পর্যটন খাতের সুষম বিকাশ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন মহাপরিকল্পনায় গোটা দেশের পর্যটন গন্তব্যকে ১১টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উপকূল বা কোস্টাল, পাহাড়, বরেন্দ্র অঞ্চল, গারো, সমুদ্রসহ বিভিন্ন অঞ্চল। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

করোনা মহামারিসহ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বল্প সময়ে পর্যটন খাতে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও টেকসই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার মধ্যে দিয়ে একটি অসম্ভবকে সম্ভব করতে নিজের দক্ষ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাতের সঙ্কট কাটিয়ে পর্যটন শিল্পের চিত্র আমুল বদলে যাবে বলে মনে করেন তিনি। প্রত্যাশিত সুসংবাদ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী রোববার (২৩ জুলাই) রাতে মুঠোফোনে কালের আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রেজেন্টেশন’র অপেক্ষা। এরপরই মহাপরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হবে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প নতুন যুগে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে।’

ট্যুরিজম বোর্ড ও আইপিই গ্লোবাল জানায়, ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটবে। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি- এই তিন ভাগে মহাপরিকল্পনাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সঙ্কট রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত এবং বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া মেলা, ফেস্টিভ্যাল, কার্নিভাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।

শুধু তাই নয়, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের গতিধারায় টাঙ্গুয়ার হাওর, পদ্মা সেতু, সুন্দরবনের শরণখোলা, নওগাঁর পাহাড়পুর, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ এলাকা পর্যটনবান্ধব করতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ডিপিপি তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্য পর্যটন এলাকাগুলোতেও কাজ চলছে। মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষা, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে।

এসব বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, নি:সন্দেহে পর্যটনবান্ধব মহাপরিকল্পনার বিকল্প নেই। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা নেপাল পর্যটনকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে পর্যটন কখনই অগ্রাধিকার পায় না। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ইতিবাচক। মহাপরিকল্পনায় বিদেশি পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি থাকতে হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে