ডেঙ্গু ঠেকাতে ডব্লিউএইচওর প্রস্তাবিত ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরামর্শ
প্রকাশিতঃ 5:43 pm | July 26, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ভ্যাকসিন আছে। যেগুলো ইতোমধ্যেই বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছে ভাইরাস নিয়ে কাজ করা সংগঠন সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্ বাংলাদেশ।
সংগঠনটি বলছে- এই ভ্যাকসিনগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের উপরে এবং এর প্রয়োগে প্রায় ৯০ শতাংশ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই দেশেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে এই দুটো ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এই পরামর্শ দেন।
‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওই সভার আয়োজন করে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশ।DRUএ দিন অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের প্রকাশনা সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। নিজ বক্তব্যে ডেঙ্গু রোগের সাম্প্রতিক সময়ের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এই রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে বর্তমান সমস্যাসমূহ ও এর সমাধানে বিশ্বব্যাপী প্রয়োগকৃত আধুনিকতম সমাধানগুলো উপস্থাপন করেন তিনি। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, জনসচেতনতা ও মশক নিধনের পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ও বিশ্বব্যাপী এর প্রয়োগ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে, যেগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের উপরে এবং এর প্রয়োগে প্রায় ৯০ শতাংশ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রয়োগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের করার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সভায় সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর হার বৃদ্ধি ও রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে অতীতের তুলনায় ঘন ঘন নতুন ডেঙ্গু সেরোটাইপের পুনরাবির্ভাব হওয়া। এ কারণে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে সিজোনাল ফ্লু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হচ্ছে যেকোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা না করা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।Dengueএছাড়াও সভায় সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন নিজ বক্তব্যে বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং কিছু আকস্মিক মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন। ডেঙ্গু হলে জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক মনে করেন, রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এই সময়ে রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এই সময়টিতে সবার সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি এ সময় রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করাই যথেষ্ট।
অধ্যাপক কাজী জুলফিকার মামুন বলেন, আমাদের ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ডেঙ্গু এন্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাই এই রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে একদিকে যেমন জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে রোগের উপসর্গ বুঝে ঠিক সময়টিতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি করা উচিত। যাতে সংক্রমিত রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়।DRUসভায় অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম নিজ বক্তব্যে সম্প্রতি করোনা অতিমারির অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের যেকোনো ভাইরাসঘটিত অতিমারি মোকাবিলা করতে একটি ‘জাতীয় ভাইরোলজি ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস্, বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুনের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ দেশবরেণ্য মেডিকেল ভাইরোলজিস্টগণ উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি