তামাক খাতে রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয়ই বেশি
প্রকাশিতঃ 5:26 pm | August 03, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস তামাক। তবে এই খাতে আয়ের চেয়ে ব্যয়ই বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবছর সরকার তামাক থেকে যে রাজস্ব পায় তার থেকে ২৭ শতাংশ বেশি অর্থ তামাকজনিত চিকিৎসায় ব্যয় হয় বলেও জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদফতর মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা জানান।
‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক ওই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।
সভায় তামাকের আর্থিক ক্ষতি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই সরকারের রাজস্ব আদায় নিয়ে কথা উঠে। কিন্তু সরকার বছরে এই খাত থেকে যে রাজস্ব পায়, তার থেকে ২৭ শতাংশ খরচ বেশি হয় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায়।
এ ক্ষেত্রে দ্রুতই আইন পাসের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনের এখনই সময়। এ জন্য এই ডেঙ্গুর প্রকোপের মুহূর্তেও তামাক নিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগই এখন মূল সমস্যা। অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাকের ব্যবহার।
বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে তামাকের ব্যবহার কমে এসেছে, কিন্তু তারপরেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার সর্বাধিক। পরোক্ষ ধূমপানে অধূমপায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরাও তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাক খাতে শক্তিশালী আইন না থাকায় মানুষ অন্যায় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আইন থাকলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। ব্যবসায়ীরা যার যার স্বার্থ দেখে, অথচ এই খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার কয়েকগুণ বেশি টাকা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় খরচ হয়।
অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, সিগারেট মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর আক্রান্ত করে। তাই এর অবাধ ব্যবহার রোধ করতে হবে। ধূমপান প্রতিরোধে শক্তিশালী আইন করতে হবে। আইন করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তারপরও এ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তামাক, জর্দা, ও গুল- এগুলো নিষিদ্ধ করতেই হবে।
তামাকমুক্ত দেশ গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০৪১ সালে ধূমপান ও তামাকমুক্ত দেশ গড়া কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে পারলে, তিনি আইনটি করে ফেলবেন। তামাকজনিত রোগে প্রতিদিন ৪৫০ জন মারা যায়। এটি করোনা ও ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার তুলনায় অনেক বেশি। এটা তো মারাত্মক।
এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আইনে যাই থাকুক, সবথেকে বড় কথা জনসচেতনতা বাড়ানো। আইন দিয়ে সবকিছু হয় না। ধূমপান রোধে দোকানে বিড়ি-সিগারেট খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
চিকিৎসকদের ধূমপানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ নিয়মিত ধূমপান করে। চিকিৎসকরা যাতে কোনোভাবেই ধূমপান না করে, তা শক্তভাবে দেখতে হবে। ধূমপানের ক্ষেত্রে আমরা নানা কারণ তুলে ধরি। কিন্তু কোনো কারণই ধূমপান করা যাবে না। আমরা প্রচারের ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাই। এ জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনে ধূমপানের সতর্কতা বা ভয়ের একটা লাইন যুক্ত করা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল প্রচারে ধূমপান সতর্কতা থাকা উচিত।
অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর তামাক পণ্যর কর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, তামাকের উপরে ট্যাক্স ও সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত। কর দ্বিগুণ করা গেলে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা এই খাত থেকে স্বাস্থ্যের বাজেটে আসতে পারে। কেননা এই খাতের ক্ষতির দায় স্বাস্থ্য বিভাগকে নিতে হয়।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি