সেনাপ্রধানের কুয়েত সফরে মিলেছে সুসংবাদ, বাংলাদেশি সেনা বাড়ছে ওকেপি কার্যক্রমে

প্রকাশিতঃ 1:49 am | August 05, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রায় তিন দশক যাবত নিরাপদ ও আধুনিক কুয়েত গঠনে নিজেদের মেধা ও শ্রম দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মরুভূমির এই দেশ পুনর্গঠনে এখন কাজ করছেন ৫ হাজার ২৪৯ জন সেনা সদস্য। এটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের পর কোন বৈদেশিক দায়িত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সংখ্যক মোতায়েন। উষ্ণ মরুভূমির প্রতিকূল আর বৈরী আবহাওয়ায় দক্ষতা আর পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাঁরা নিজেদের গৌরব আর সুনামকে দেদীপ্যমান করেছেন।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পরিশ্রম, দক্ষতা, সাহস আর নিষ্ঠার ওপর বরাবরই আস্থাশীল দেশটি এবার অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওকেপি) কার্যক্রমে আরও অধিক সংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র কুয়েত সফরে দুই দেশের এই সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

স্বয়ং সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গত মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) কুয়েতে বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্ট (বিএমসি) সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে দিয়েছেন সুসংবাদ। তিনি বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে কুয়েতের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর লোকবল আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কুয়েতের সঙ্গে সফল আলোচনা হয়েছে।’

বন্ধুপ্রতিম দেশ কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ, নিবিড় ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গাজী হাসান আল-শামারি’র আমন্ত্রণে গত রোববার (৩০ জুলাই) দেশটি সফর করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় পারস্য উপসাগরের প্রান্তে অবস্থিত দেশটির ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা শেখ আহমেদ আল-ফাহাদ, ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখা ড. শামায়েল আহমেদ খালেদ আল-সাবাহ, সশস্ত্র বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেজর জেনারেল গাজী হাসান আল-শামারি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সাক্ষাতকালে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তন্মধ্যে অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওকেপি) কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো অধিক সংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন সংক্রান্ত বিষয় ছিল অন্যতম। এরই ধারাবাহিকতায় কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফর করবেন।

বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের নিষ্ঠা, নৈতিক মনোবল, সাহস ও আত্মত্যাগকে বিশেষ মর্যাদায় দেখে আসছে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কুয়েত। বরাবরই তাঁরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেছেন বাংলাদেশি সেনাদের। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন শুক্রবার (০৪ আগস্ট) চারদিনের কুয়েত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়ে কুয়েত ও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইএসপিআর। একই রকম মত প্রকাশ করে সামরিক কূটনীতিকরা মনে করছেন, সেনাপ্রধানের সরকারি এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

আইএসপিআর আরও জানায়, সফরকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ কুয়েতে বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্টস্ (বিএমসি) সদর দপ্তর পরিদর্শনসহ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এর পাশাপাশি তিনি কুয়েত সামরিক বাহিনীর আলী আল সাবাহ্ মিলিটারি একাডেমি পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্ট (বিএমসি) সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কুয়েতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পারফরম্যান্সে অত্যন্ত খুশি। আশা করা হচ্ছে, এই সেক্টর থেকে আরও কিছু লোক পাঠানো সম্ভব হবে কুয়েতে।

এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান সেদিন আরও বলেন, ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনে (ওকেপি) অন্যান্য দেশের যারা আছেন তাদের চেয়ে বাংলাদেশিরা অনেক বেশি পরিশ্রমী, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও মানবিক। এসব গুণাবলি শান্তি মিশনে বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে এক নম্বরে অবস্থান করছে।’

এ সময় কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে