প্রথমবারের মতো ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জ’র পথচলা শুরু, যুগোপযোগী সেনাবাহিনীর অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 9:27 pm | August 16, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
প্রায় দেড় বছর আগে শরিয়তপুরের জাজিরায় পথচলা শুরু হয়েছিল ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’-এর। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নিজের প্রাণোচ্ছ্বল ছোট ভাইয়ের নামে সেনানিবাসটির উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন স্নেহ-মমতা আর শ্রদ্ধার মিশেলে অন্তরপূর্ণ স্বার্থক হৃদয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভালোবাসার সারণিতে ফিরিয়ে আনা হয় বাঙালির মুক্তিদাতার কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলকে। সময়ের গতিধারায় এই সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য ফায়ারিং অনুশীলনের ধারায় নতুন সংযোজন ঘটেছে অত্যাধুনিক ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জ’র।
বুধবার (১৬ আগস্ট) শেখ রাসেল সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এই প্রথম বৃহৎ আকারে ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জ’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এই সেনানিবাসের সৈনিক ও কর্মকর্তাদের যুগোপযোগী ও আধুনিক প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপের সূচনা করলেন সেনাপ্রধান। এদিন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে।’
জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এদিন প্রথমে নতুন নির্মিত অত্যাধুনিক ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জের সৈনিকদের দক্ষতা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ১০০ মিটার দূরত্ব থেকে ফায়ারিংসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু পরিবর্তনের সুবিধা ঘুরে দেখেন ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের যে মূল মন্ত্র এক গুলি, এক শত্রু, এটাকে বাস্তবায়ন করতে হলে ফায়ারিং চর্চার বিকল্প নেই। আর সেই ফায়ারিং যদি সঠিকভাবে চর্চা করতে হয় তাহলে আমাদের ফায়ারিং রেঞ্জের দরকার আছে। এই প্রথম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আমরা অত্যাধুনিক ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জে করলাম বড় আকারে। ট্রেনিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের একটা মাত্রা যোগ হলো। ভবিষ্যতে আমরা অন্যান্য গ্যারিসনে যেখানে স্টপবাট এবং জায়গা স্বল্পতা আছে সেখানে এই ধরণের ফায়ারিং রেঞ্জ করতে পারি। এবং এর থেকে ফিডব্যাক নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘একটি সেনানিবাসের যে সমস্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকা দরকার সেগুলো আমরা চেষ্টা করছি সবার মধ্যে যাতে বিরাজমান থাকে। যাতে এখানে যে সমস্ত সৈনিক ও অফিসাররা থাকবেন সঠিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেসিও ও অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যদের পারিবারিক বাসস্থান, গ্যারিসন কেন্দ্রীয় মসজিদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের প্রশংসা করেন জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন বলে উল্লেখ করেন।’ ফোর্সেস গোল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় শেখ রাসেল সেনানিবাস বাস্তবায়ন হয়েছে বলেও জানান সেনাপ্রধান।

তিনি পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ভবিষ্যতে এই এলাকার মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে আরও সুদূর প্রসারী ও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় সেনানীরা জাতীয় যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহিনুল হক, সেনাসদর ও সাভার এরিয়ার ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, অন্যান্য পদবির সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে