মহানবির (সা.) ক্ষমার অতুলনীয় আদর্শ

প্রকাশিতঃ 10:33 am | August 25, 2023

মাহমুদ আহমদ:

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা এ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করছেন, হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠ কর এবং তার জন্য বেশি বেশি করে শান্তি কামনা কর’ (সুরা আল আহযাব, আয়াত: ৫৬)।

বিশ্বনবিকে (সা.) কেবল মক্কা শহর বা সেই দেশ বা তৎকালিন যুগের লোকদের জন্যই আবির্ভূত তিনি। তিনি (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত সারা দুনিয়ার মানুষ ও জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। মহানবির (সা.) অতুলনীয় জীবনাদর্শ ছিল কতই না উত্তম। মহানবির (সা.) ক্ষমার অগণিত ঘটনা রয়েছে, এখানে শুধুমাত্র একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাঈদ বিন আবি সাঈদ (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.)-কে একথা বলতে শুনেছেন; রাসুল করিম (সা.) নজদ অভিমুখে যুদ্ধ অভিযান প্রেরণ করেন আর তারা বনু হানিফার এক ব্যক্তি সুমামাহ বিন আসাল’কে বন্দী করে নিয়ে আসেন। সাহাবীরা তাকে মসজিদে নববীর পিলারের সাথে বেঁধে রাখেন।

মহানবি (সা.) তার কাছে এসে বলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কি অজুহাত আছে বা তোমার সাথে কি ব্যবহার করা হবে বলে তুমি মনে কর। সে বললো, আমার সুধারণা রয়েছে। যদি আপনি (সা.) আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনিকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি আমাকে ক্ষমা করেন তাহলে আপনি এমন এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন যে এর মূল্যায়ন করতে জানে। কিন্তু যদি আপনি (সা.) সম্পদ চান তাহলে যত ইচ্ছে নিয়ে নিন।

এভাবেই পরের দিবস উদয় হয়। তিনি (সা.) পরের দিন আবারো আসেন এবং সুমামাহ’কে জিজ্ঞেস করেন, তোমার সংকল্প কি? সুমামাহ বলেন, আমিতো গতকালই আপনার সমীপে নিবদেন করেছি, যদি আপনি আমাকে ক্ষমা করেন তাহলে আপনি এমন এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন যে এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে জানে। তিনি এখানেই কথা বন্ধ করেন আর পরের দিন সূর্য উদয়ের পর পুনরায় বলেন, হে সুমামাহ তোমার নিয়্যত কি? সে বললো, আমার যা কিছু বলার ছিলো তা বলেছি।

তিনি (সা.) বলেন, একে মুক্ত করে দাও। সুমামাহ মসজিদের কাছে খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করে, অতপর মসজিদে প্রবেশ করে কলেমা শাহাদত পাঠ করে আর বলেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! আল্লাহর কসম, পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বেশি অপছন্দ ছিল আপনার চেহারা আর বর্তমান অবস্থা এমন যে, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হচ্ছে আপনার চেহারা।

আল্লাহর কসম পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বেশি অপছন্দ ছিল আপনার ধর্ম আর বর্তমান অবস্থায় আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হচ্ছে আপনার আনিত ধর্ম। আল্লাহর কসম! পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতাম আপনার শহরকে আর এখন এ শহরই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।

আজ সমগ্র বিশ্ব যদি বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবির (সা.) আদর্শ অনুসরণ করতো তাহলে বিশ্বময় এত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতো না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা, শ্রেষ্ঠনবির আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা এবং তার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

আপনার (সা.) ঘোড় সওয়ারীরা তখন আমাকে ধরেছে যখন আমি উমরাহ করতে চাচ্ছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে শুভসংবাদ দেন আর তাকে উমরাহ করার নির্দেশ দেন। যখন তিনি মক্কায় পৌঁছেন তখন কেই বললো, তুমি কি সাবী হয়ে গেছো? উত্তরে সে বললো, না, আমি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছি’ (বোখারি)।

দেখুন, তিনি (সা.) তিন দিন পর্যন্ত তাকে ইসলামের উত্তম শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করার প্রজ্ঞাপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করেন যাতে সে মুসলমানদের ইবাদতের রীতি-পদ্ধতি ও নিষ্ঠা এবং আপন প্রভুর সমীপে কিভাবে অনুনয় বিনয় করে তা দেখতে পায়। এছাড়া মুসলমানরা মহানবির (সা.) প্রতি কিভাবে ভালবাসা ও প্রীতি প্রকাশ করে আর তিনিও (সা.) তার মান্যকারীদেরকে কি শিক্ষা প্রদান করেন তা যেন সে উপলব্ধি করতে পারে।

একটু ভেবে দেখুন, মহানবি (সা.) তাকে সরাসরি ইসলামের কোনো তবলিগও করেন নি। কেবল প্রত্যহ জিজ্ঞাসা করতেন, তোমার সংকল্প কি? যাতে বুঝতে পারেন এর ওপর কোন প্রভাব পড়েছে কি না আর এভাবে তৃতীয় দিন মহানবির (সা.) দিব্য শক্তি বুঝতে পেরেছে যে, এখন তার মাঝে কোমলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই কোন অঙ্গীকার ছাড়াই তাকে মুক্ত করে দেন। তারপর যে ফলাফল সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ তার ইসলাম গ্রহণ এটাই প্রমাণ করে যে, মহানবির (সা.) ধারণা সঠিক ছিল।

আমাদের চিন্তা করার বিষয়, কত অতুলনীয় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্তই মহানবি (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এই উত্তম আদর্শ তিনি শুধু মুসলমানদের সাথেই করতেন না বরং ইসলাম বিরোধী শত্রুদের প্রতিও প্রদর্শন করেছেন। মহানবির (সা.) এই উত্তম আদর্শের ফলেই ইসলামের পতাকা তোলে সবাই একত্রিত হয়েছিলেন।

আর এ জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে বলেছেন: ‘রহমতুল্লীল আলামীন’ অর্থাৎ সারা বিশ্বের জন্য তিনি হলেন রহমত স্বরূপ। জনদরূদী এই এই বিশ্বনবী (সা.) মানুষকে সকল প্রকার পঙ্কিলতা, অনিয়ম, অনাচার, পাপাচার ও অন্ধকারের বেড়াজাল হতে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার সংগ্রাম ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার, তিনি সংগ্রাম করেছেন অশান্ত বিশ্বকে শান্ত করার, তিনি রাজ্য দখলের জন্য সংগ্রাম করেন নি। সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা না পর্যন্ত তিনি ক্ষান্ত হন নাই।

মহানবির (সা.) মাধ্যমে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী একই ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। জাতি, ধর্ম ও বর্ণজনিত সকল ভেদাভেদকে তিনি বিলীন করেছেন।

আজ সমগ্র বিশ্ব যদি বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবির (সা.) আদর্শ অনুসরণ করতো তাহলে বিশ্বময় এত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতো না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা, শ্রেষ্ঠনবির আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা এবং তার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।