মাঠে শক্ত অবস্থানে আ.লীগের সালাম মূর্শেদী, সমীকরণে পিছিয়ে বিএনপি’র হেলাল
প্রকাশিতঃ 9:21 am | September 03, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও খুলনা জেলা প্রতিবেদক :
একে তো রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। এই আসন থেকে বারবার ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিপরীতে ভোটে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। মাত্র দু’বার জিতেছে দলটি। ঘনিয়ে আসা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের হিসাব-নিকাশে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
মাঠে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন টানা দু’বার সংসদ নির্বাচনে বিজয়মাল্য পড়া সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী। এলাকায় নিয়মিত উপস্থিতি, উন্নয়নে প্রাধান্য, দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন, সাধারণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমুন্নত রাখাসহ নানা কারণে দেশের এক সময়কার নন্দিত ফুটবল তারকাকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে উন্নয়নের স্রোতধারায় সংযুক্ত ভোটাররা। ভোটের সমীকরণে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে মনে করেন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
আসনটিতে এবারও বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। তবে করোনা মহামারিসহ দুর্যোগে-দু:সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে না থাকায় বেশ ব্যাকফুটে রয়েছেন বিএনপি’র এই প্রার্থী। বিশেষ করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও শান্তিতে বিশ্বাসী এই অঞ্চলের মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই নিজেদের রায় দিতে প্রস্তুত, এমন মত বিশ্লেষকদেরও।
জানা যায়, আব্দুস সালাম মূর্শেদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত অব্যাহত রাখেন। নিয়ম করেই রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়ার মাটি-মানুষের পাশে থেকেছেন। জনসম্পৃক্ত সংসদ সদস্য হওয়ায় ভোটের হাওয়ায় আদাজল খেয়ে নেমে পড়ার সময়টিতে স্থানীয় জনসাধারণের অভূতপূর্ব সমর্থন পাচ্ছেন। ভোট নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ তৈরি হচ্ছে। দলেও তেমন একটা গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, এক সময় সর্বহারা ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা। কিন্তু সন্ত্রাস দমনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর দৃঢ় ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে সেখানে ফিরেছে শান্তি। হয়ে ওঠেছে স্বস্তির জনপদ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, বর্তমানে খুলনা-৪ আসনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আসনটিতে ১০০ এর ওপরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, প্রাথমিক, কারিগরি কলেজ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে। ৩০০ কিলোমিটার নতুন সড়ক পাকা হয়েছে এবং ১৭৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয়েছে। ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে, তিনটি হাইস্কুল ও দু’টি কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। দুই উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে শতভাগ মানুষ। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পুরোদমে চলছে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হচ্ছে আতাই সেতুর নির্মাণ কাজ। তিন উপজেলায় ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট’র কাজ শেষ হয়েছে। দিঘলিয়ায় টিটিসি ও টিএসসি ভবন নির্মাণ হয়েছে। তিন উপজেলায় ৩০টি মডেল বাজার নির্মাণ হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে দিঘলিয়া, তেরখাদা ও রূপসা উপজেলায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব উপজেলার মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশানের উন্নয়নে সব ধর্মাবলম্বীর মানুষ খুশি। তরুণ ও যুব সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় খেলাধুলা উপযোগী ৪০টিরও বেশি খেলার মাঠের বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য।
ভোট এগিয়ে আসায় আসনটিতে আরও অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেদের জানান দিচ্ছেন। তাঁরা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত সংসদ সদস্য সুজার ছেলে এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ণ। যদিও দলীয় হাইকমান্ড গ্রহণযোগ্যতা, ভোটের মাঠ ও জনপ্রিয়তাসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর হাতে তৃতীয়বারের মতো নৌকা প্রতীক তুলে দেবেন বলে মনে করেন অনেকেই।
এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জাতীয় পার্টির শাহ হাদিউজ্জামান, খেলাফত মজলিসের সাখাওয়াত হোসাইন, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা কবিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ইউনুস আহমাদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের আবদুল হালিম প্রার্থী হতে পারেন।
কালের আলো/এসআর/এমকে