আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সরগরম ঢাকা
প্রকাশিতঃ 8:52 pm | September 07, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছে ঢাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় কূটনীতির ছায়াপাত ঘটছে দেশের রাজনীতিতে। এই সেপ্টেম্বরে ছায়া আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। চলতি মাসে এই তৎপরতা পেয়েছে নতুন মাত্রা। বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সফরে এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এর ঠিক চার দিন পর বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ দুই সফরের মধ্যবর্তী সময়ে আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) আবার জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। সব মিলে এই মাসে ঢাকার কূটনৈতিক ক্যালেন্ডার ঠাসা থাকছে একাধিক হাই-প্রোফাইল পরিদর্শন ও নানা চুক্তিতে।
সূত্র জানায়, দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিশ্ব ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপ করবেন, কথা বলবেন এবং এখানে বাংলাদেশের অবস্থান তিনি তুলে ধরবেন। জি-২০ মঞ্চে গ্লোবল সাউথের কণ্ঠস্বর হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।
এসব বৈঠক শেষ করে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফিরবেন। তিনি ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বরণ করে নিবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। এমানুয়েল ম্যাক্রাঁ বাংলাদেশ সফর করবেন আট ঘণ্টার জন্য। এই কূটনৈতিক তৎপরতা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল ঘটনা এবং নির্বাচনের আগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ঢাকা। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, ভয়ভীতি এবং হুমকি যখন অনেকটাই নিয়মে রূপ নিয়েছে তখন ঝানু কূটনীতিক শেখ হাসিনা পাশার দান উল্টে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেনের নরম-গরম কৌশল কূটনীতিতে সব অন্ধকার সরিয়ে দিচ্ছে আলোর দিশা। ফলত স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর গোষ্ঠীর মুখ থেকে উবে গেছে হাসি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সবারই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশ। দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাজার এবং চলমান ভূ-রাজনীতিতে কৌশলগত অবস্থানের কারণে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখানে বাংলাদেশের স্বার্থও রয়েছে; কিন্তু তা আদায় করা নির্ভর করে কূটনীতি বা দরকষাকষির ওপর। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। আর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে জাপানেরও নজর রয়েছে বাংলাদেশে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ এই দেশে অনেক বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। তবে বিদেশিদের কেউ কেউ বাংলাদেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখতে চায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়িতে নেতিবাচক সমালোচনা চলছে দেশজুড়েই।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর আরো আক্রমণাত্মক হতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে এবং এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপ্তি বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাপারে কোনো রাখঢাক রাখছে না। এতদিন বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলেছে, যেকোনো মূল্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এজন্য বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যু। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সামনের দিনগুলোতে এই বিচারিক কার্যক্রম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের একাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞায় একমাত্র বিষয় না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্য ধরনের চাপও প্রয়োগ করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এখন বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গটি সামনে চলে এসেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিরাপত্তা সংলাপে ড. ইউনূস প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করছে। আর এটি যেন সরকারকে বিপদে না ফেলে, বিশ্ব কূটনীতিতে যেন বাংলাদেশ একঘরে না হয়ে পড়ে, সেই জন্যই শেখ হাসিনা এই পাল্টা কূটনীতির কৌশল সফলভাবে প্রয়োগ করছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর একটি ফ্রান্স আবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্যে দিয়ে রাশিয়ার সমর্থন বাংলাদেশ পাবে। চীন বাংলাদেশের পাশেই রয়েছে। ভারত সবসময় বলেছে, তারা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে বিশ্ব কূটনীতিতে মার্কিন চাপ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের পাল্টা কৌশল শেষ পর্যন্ত দেশের ভেতরে-বাইরের ষড়যন্ত্রকারীদের পরাস্ত করতে সক্ষম হবে। আরও একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতার প্রমাণ মিলবে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম