সেই চ্যালেঞ্জেও জিতলেন আইজিপি!
প্রকাশিতঃ 9:43 am | January 03, 2019
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই ‘চ্যালেঞ্জ’ শব্দটিই যেন বার বার শুনতে হয়েছে তাকে। নিজের ব্যাচমেট সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকও তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই নতুন আইজিপি’র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
বাস্তবতা বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করে সবেচেয় বড় সেই চ্যালেঞ্জেই জিতেছেন বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। জঙ্গিবাদ নির্মুল ও মাদকের রাশ টেনে ধরার কাজে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
আবার কোন রকম সহিংসতা ও রক্তারক্তি বড় কোন ঘটনা ছাড়াই এই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করে সফলতার আরেকটি নজির স্থাপন করেছেন পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। দেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও কঠোর মনোভাবের ফলেই নির্বাচনের আগে থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
প্রতিবার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীসহ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের ওপর আক্রমণ হলেও এবার কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হওয়ায় সন্তুষ্ট দেশের সচেতন নাগরিকরা। পুলিশ প্রধান স্বয়ং নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় কেউ জড়ালে কোন রকম ছাড় দেওয়া হবে না। এই প্রথম নির্বাচনকালীন সহিংসতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকার কৃতিত্ব অবশ্য দেশের সাধারণ মানুষকেই দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেছেন, ‘দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছে।’
ভোট উৎসবের মধ্যে দিয়ে গত রোববার (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব রকমের শঙ্কা ভুলে এই উৎসবে শামিল হন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সর্বস্তরের মানুষ। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী এবার নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। যা বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
এতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীসহ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের ওপর কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হওয়ায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন সবাই। বিশেষ করে বড় রকমের সহিংসতা ছাড়াও যে নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা দিতে পারে এবং অসাধ্য সাধন করতে পারে পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ায়ারী এই দৃষ্টান্তই জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংস ঘটনা বিশ্ববাসী দেখেছে। এবারের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছিল না। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর নোয়াখালীর সুবর্ণ চরে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলো। তবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা নুন্যতম ছাড় পাবে না বলে সাফ কথা জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
তিনি জানান, জড়িত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে একজন অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।’
জানা যায়, এই সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিন ধাপে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ছক করেন পুলিশ প্রধান। এর মধ্যে নির্বাচন-পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর। দুটি ধাপ এরই মধ্যে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিও বেশ ভালো। দু-একটি ঘটনার খবর আসছে। তবে নির্বাচন-পরবর্তী এসব সহিংসতার ঘটনায় কেউ জড়ালে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না-গণমাধ্যমকে বলছিলেন আইজিপি।
নির্বাচনের দিন সকালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করে পুলিশ প্রধান বলেন, সারাদেশে দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ চলছে। সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলই বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে ফলে সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যায়। আমরা এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব রকম প্রস্তুতি রেখেছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের সব নির্বাচনের চেয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। এখন নির্বাচন-পরবর্তী কোনো সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। দলমত নির্বিশেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সেটা যে বা যাদের বিরুদ্ধেই হোক।’
২০১৩-১৪ সালের ভয়ঙ্কর আগুন সন্ত্রাসের ভীতিকর পরিস্থিতি সম্পর্কে স্মরণ করে আইজিপি গণমাধ্যমকে বলেন, এই দেশের মানুষ ২০১৩ ও ১৪ সালের ভয়ঙ্কর জ্বালাও-পোড়াও দেখেছে। তখন কী ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তা সবার মনে আছে। যেভাবে সাধারণ জনগণ সহিংসতার শিকার হয়েছে, সেটা ছিল অকল্পনীয়।
তখন একজন রিকশাওয়ালা, একজন খেটে খাওয়া মানুষ হয়তো গাড়িতে যাচ্ছিল, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। যে মানুষটি সহিংসতার শিকার হয়েছিল তার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তার পরিবার এখনও হয়তো রাস্তায় দিনাতিপাত করছে।
বলতে থাকেন, সেই সময় আমাদের অনেক সহকর্মীকেও হারিয়েছি। তাদের পরিবারে যারা বেঁচে আছেন, এখন তাদের অবস্থা কী? মানুষ সহিংসতা চায় না। এটা এ নির্বাচনে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। মানুষ সুন্দর জীবন চায়। তাই এবার নির্বাচন ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনা কম হয়েছে।’
পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। সারাদেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা কম হওয়া সে রকম একটা ম্যাসেজ বলেও মনে করেন আইজিপি।
কালের আলো/ওএইচএ/এই