সমুজ্জ্বল ৪ টি ইউনিটের পতাকা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 8:50 pm | October 03, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

২০১৪ সালের পহেলা জুলাই কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত ১৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট বা ভিগোরাস এইটিন। ৪ টি আর্টিলারি কোর্স সম্পন্ন, ২০১৮ সালে নির্বাচনী দায়িত্ব, ২০১৯-২০ সালে মৌলভীবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ২০২০-২১ সালে অপারেশন কোভিড শিল্ড এবং ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ’র দোয়ারা বাজারে বন্যাকালীন দায়িত্ব পালন করে সফলতা দেখিয়েছে এই রেজিমেন্ট।

২১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন বা গ্লোরিয়াস স্যাপার্স’র কথাও ধরা যাক। ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই সিলেট সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত এই ইউনিট ১৭ পদাতিক ডিভিশন গঠনের প্রধান কারিগরও। চলতি বছর তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করে কুড়িয়েছে সুনাম। একইভাবে রামু সেনানিবাসে গোড়াপত্তন হওয়া ৩৭ বীর বা অগ্রণী সাইত্রিশ এবং ৩৮ বীর বা রণজয়ী আটত্রিশ মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ত্রাণ ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে।

এভাবেই দেশ ও দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দায়িত্ব যথাযথ পালনে বিশেষ অবদান, প্রশিক্ষণ ও অপারেশন কর্মকাণ্ডে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই চারটি ইউনিট বা রেজিমেন্টকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে এসব ইউনিটকে কালার প্রদান করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। চৌকস ব্যান্ড দলের বাজনার তালে প্যারেড গ্রাউন্ড রাখা কালো মোড়কে ঢাকা চারটি পতাকা উন্মুক্ত করে চার ইউনিট প্রধানের হাতে তুলে দেন তিনি।

এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকের এই কালারপ্রাপ্তি এই ইউনিটসমূহের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয় হয়ে থাকবে। তাঁরা ভবিষ্যতে এখনকার চেয়ে আরও সুন্দর, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব’র সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

জানা যায়, বিভিন্ন যুদ্ধের সময় দলনেতা বা অধিনায়কের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দল বা ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার বা পতাকা বহন করার রেওয়াজ রয়েছে। এটি একটি রেজিমেন্টের শৌর্যবীর্য, তেজোদীপ্ততা ও কর্মশক্তির প্রতীকও বটে! সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে গৌরবের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান করে আসছে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অপারেশনাল কার্যক্রমে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য এবার চারটি ইউনিটকে দেওয়া পতাকা আগামীতেও পেশাগত কাজের মাধ্যমে সমুজ্জ্বল থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান।

এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের এমআর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় ১৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি’র অধিনায়কের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাপ্রধানকে সালাম প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আমাদের ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা এবং পৃষ্ঠপোষকতা সার্বক্ষণিকভাবে করে যাচ্ছেন।’

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করে আছে এবং সেটি অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে অবস্থান করছে। এটা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয় আমাদের জন্য। এই অর্জন একদিনে হয়নি। আমরা অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ শিকার করেছি।’

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে সব সময়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এর পাশাপাশি আমরা শান্তিকালীন সময়েও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে অনেক দায়িত্ব পালন করে থাকি।’ সেনাপ্রধান সকলকে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও যোগ্য সেনাসদস্য হিসেবে গড়ে উঠার নির্দেশনা প্রদান করেন।

এছাড়া একই দিনে সেনাপ্রধান চট্টগ্রাম আর্মি মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম একযোগে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম আর্মি মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো।’

কালের আলো/এমএএএমকে