মশা মারতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলা যাবে না: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:06 pm | October 08, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মশা নিধনে কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে বলেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সবাইকে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে, কীটনাশক যত বেশি ব্যবহার করবেন, ততবেশি পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য আমি প্রথম থেকে বলেছি, মশা মারতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলা যাবে না। এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

রোববার (৮ অক্টোবর) বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চলমান ডেঙ্গু বিরোধী অভিযানে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার সফল হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, একজন মানুষও যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয়, তাহলে সফলতা দাবি করা যায়। আমার অবস্থান থেকে সফলতা তখনই দাবি করতে পারব, যখন একজন লোকও আক্রান্ত হবে না। যেহেতু আক্রান্ত হচ্ছে, সেহেতু সফলতা দাবি করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, এডিস মশা মূলত মানুষের বাসা-বাড়িতে জন্ম নেয়। নদী-নালা, খাল-বিল, নলা-নর্দমা অথবা আবর্জনায় সাধারণত এডিস মশার জন্ম হয় না। ৯৯ শতাংশ মশার প্রজনন যেহেতু ঘরের ভেতরে বা পাশের অবকাঠামোতে হয়, সেহেতু আমরা বছরের প্রথম থেকে সিটি করপোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে মশা নিধনের কাজ করছি। জানুয়ারি মাসে আমরা সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা, লোকবল, যন্ত্রপাতি, কীটনাশক ওষুধ ও ব্যবস্থাপনা যাচাই করি। তারা কতটুকু কাজ করছে সেটি আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের একটি সেল রয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আগে জানুয়ারি মাস থেকে বৃষ্টি হতো। আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এখন অক্টোবর মাসেও বিক্রি হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সামান্য সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল। এডিস মশা প্রজননের জন্য অল্প বৃষ্টিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। কারণ, কম পানির আধার এডিস মশা জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। সাধারণত অক্টোবর মাসে এডিস মশা হ্রাস পায়। কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাসে গ্লোবালি এডিস মশার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের এখানে এটাকে মোকাবিলা করার জন্য দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে।

এডিস মশা মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার জনগণকে সচেতন করা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টিভিসি তৈরি করে টেলিভিশনে প্রচার করেছি। আমাদের সিটি করপোরেশন জনগণকে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিটিং করেছে এবং ইমাম সাহেবরা যাতে মসজিদে সচেতন করেন সেটি বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। এতে জনগণের সচেতনতার মাত্রা বেড়েছে। ঢাকায় আগে যেখানে ২ থেকে আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যেতো, সেখানে এখন ৬০০-৭০০ তে নেমে এসেছে।

তিনি এ সময় জানুয়ারি মাস থেকে মশার ঔষুধ ছিটানোর বিষয়ে বলেন, যখন মশা অথবা লার্ভা নেই তখন ওষুধ ছিটিয়ে কোন লাভ হয় না। সিটি কর্পোরেশন গুলো যখন থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের পরে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তখন থেকেই মশার ওষুধ ছিটানো শুরু করে। আবার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চাইলেও আমরা প্রতিদিন মশার ওষুধ দিতে পারি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মোতাবেক প্রতি ২-৩ দিন অন্তর অন্তর মশার ওষুধ দেওয়া যায়।

সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সাথে সাথে আমাদের গ্রামেগঞ্জেও এখন প্রচুর বিল্ডিং তৈরি হয়েছে যেখানে পরিষ্কার পানি জমাটবদ্ধ থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে সেখান থেকে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব। মোটকথা সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে আমাদের সবার নাগরিক হিসাবে সচেতনতা এবং ডেঙ্গু মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা।

এ সময় বাড্ডার একটি নির্মানাধীন স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ভবনটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং অন্য দুটি ভবনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

কালের আলো/ডিএস/এমএম