প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা সেনাপ্রধানের, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিরলসভাবে কাজের অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 7:39 pm | October 10, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিরলসভাবে কাজের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘দেশ ও জাতির উন্নয়নে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে থাকতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গর্বিত।’

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মহান আল্লাহ’র নিকট শুকরিয়া আদায় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সকলে সুস্থ থেকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ আজকের যে উন্নয়ন এবং বিশ্বের দরবারে আমাদের যে সম্মান অর্জিত হয়েছে তা কখনোই সম্ভব হতো না যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো।

আজকের এই অনুষ্ঠানের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মূল রূপকার, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পেয়েছি এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই সেনাবাহিনীর সকল শহীদদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শুধু নয় তার পরবর্তী সময়েও দেশে এবং বিদেশে আমাদের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে। আমি সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।’

প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের এক রোল মডেল বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। দেশের এই অভাবনীয় উন্নয়নের সাথে আপনার সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও ক্রমাগত একটি আধুনিক ও বিশ্বমানের সেনাবাহিনীতে পরিণত হচ্ছে। আর এই জন্য আমি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি রক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, আত্মত্যাগ, দক্ষতা এবং সর্বোপরি নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি ও প্রভূত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

সেনাবাহিনী পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি দক্ষ এবং সমৃদ্ধ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি দক্ষ এবং সমৃদ্ধ বলেও তাৎপর্যপূর্ণ উচ্চারণ সেনাপ্রধানের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা অনুযায়ী পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট কর্তৃক সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজাইন অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুণগত মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে এবং সময়োচিত দিকনির্দেশনায় দেশের ভৌত অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অসামান্য উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে তার সাথে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ’-যোগ করেন সেনাপ্রধান।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পও গুণগতমান বজায় রেখে সম্পন্ন
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পসমূহ সমাপ্ত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে থাকে জানিয়ে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটিও কাঙ্ক্ষিত সময়ে মধ্যে গুণগতমান বজায় রেখে সম্পন্ন করা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহ, সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জনসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতা। তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের শেষের দিকে সৃষ্ট মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল তখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে সমস্ত ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে প্রকল্পের কাজ চলমান রেখেছিল। যার ফলে ঢাকা থেকে যশোর সংযোগকারী ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথটি আজ উন্মুক্ত হচ্ছে। যে জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। প্রকল্পটির পরামর্শক সেবা প্রত্যক্ষ তদারকির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমি প্রধান সমন্বয়ে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট’র এই সমস্ত সকল অফিসার জেসি অন্যান্য পদবীর সৈনিকবৃন্দ এবং দেশীয় ও বিদেশি পরামর্শকদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হলো। যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এই রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে।

কালের আলো/এমএএএমকে