যে কারণে এবার ফিলিস্তিনিদের ‌আশ্রয় দিচ্ছে না মিশর-জর্ডান

প্রকাশিতঃ 7:08 pm | October 21, 2023

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

হামাসের হামলার জবাবে গাজায় অনবরত বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরায়েল। ছোট্ট জায়গায় সর্বোচ্চ ঘনবসতি থাকা গাজার মানুষদের অন্য প্রান্তে চলে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও ফিলিস্তিনিদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকা দূরের কথা, মৌলিক অধিকারের সুযোগও নেই কোথাও।

গাজার দক্ষিণে পরিস্থিতি এতটাই মানবেতর যে অনেকে উত্তরে চলে যাচ্ছেন। পশ্চিম তীরেও আরও আগে থেকেই ইসরায়েলের নানা দমন-পীড়ন চলছে। গাজা এবং পশ্চিম তীর দুই দিকেই ফিলিস্তিনের মানুষ এখন অনেকটা বন্দিদশায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
কিন্তু এই দুই অংশের সঙ্গে যেসব দেশের সীমান্ত, সেই মিশর বা জর্ডান কেউই এবার হতভাগ্য ফিলিস্তিনিদের ঠাঁই দিতে রাজি হচ্ছে না।জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, জর্ডানে কোনো শরণার্থী নয়, মিশরেও কোনো শরণার্থী নয়। এই মানবিক সংকট গাজা এবং পশ্চিম তীরের ভেতরেই সামাল দিতে হবে। ফিলিস্তিনি সংকট ও তাদের ভবিষ্যৎ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া বা চেষ্টা করা যাবে না।
কেন আশ্রয় দিতে চায় না প্রতিবেশীরা?

মিশর
ফিলিস্তিনের গাজা অংশের সঙ্গে ইসরায়েল ছাড়া সীমান্ত রয়েছে কেবল মিশরের। মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিও জর্ডানের বাদশাহর মতো ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য কোনো সামরিক উপায়ে বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে যে কোনো পদক্ষেপ মিশর প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি আরও বলেছেন, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে মিশরের দিকে পাঠানোর চিন্তা করার আরেক অর্থ, পশ্চিম তীরের মানুষদের বাস্তুচ্যুত করে জর্ডানে পাঠানোর মতো পরিস্থিতি। এছাড়া, এমন পদক্ষেপে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য মিশর বা আন্তর্জাতিক মহলে যে আলোচনা চলছে, সেটি আর সম্ভব হবে না।
১৯৭৮ সালে মিশরই ছিল প্রথম কোনো আরব রাষ্ট্র, যারা কয়েক দফা যুদ্ধের পর শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় আসে।
২০০৭ সালে হামাস গোষ্ঠী গাজার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সঙ্গে মিশরও গাজা সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, হামাস যাতে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে মিশরে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যই এত কড়াকড়ি। কারণ বাড়তি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপরতা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা মিশরের নেই।
হামাস আশির দশকে সৃষ্টি হয়েছিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে। মুসলিম ব্রাদারহুড ২০১১ সালে মিশরের ক্ষমতায় আসলেও এখন তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে হামাসের শেকড়ের সম্পর্কটাও মিশরীয় কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

মূলত নিজ দেশে শরণার্থীর ঢল চায় না মিশর। সেটি দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিশরকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে, যা স্থায়ীহয়ে
যেতেপারে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট গাজার উদ্বাস্তুদের ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযান শেষ না হচ্ছে।

মিশরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীর কোনো সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। ধারণা করা হয়, সংখ্যাটা ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মতো হতে পারে।
জাতিসংঘের হিসাবে, মিশরে সাড়ে তিন লাখের বেশি নিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছে, যাদের দেড় লাখই এসেছে সিরিয়া থেকে।তাই মিশরের শঙ্কা, একবার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী ঢুকলে তাদের আর তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে ফেরানো সম্ভব হবেনা।
জর্ডান
জর্ডানের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সীমান্ত পশ্চিম তীরের দিকে। মিশরের মতো জর্ডানেরও রয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। যেমন- গ্যাস তো বটেই, সুপেয় পানির জন্যও ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করতে হয় জর্ডানকে।
তুরস্কের হাসান কালিয়ানচু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মুরাত আসলানের মতে, জর্ডান সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। জর্ডান আমেরিকার মিত্র দেশ। এছাড়া আমেরিকা ও জার্মানির বিমান সেখানে অবস্থান নিয়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিন বিষয়ে জর্ডান অনেকটা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করবে বলে মনে করেন তিনি।সবশেষ গাজায় হাসপাতালে হামলার প্রেক্ষাপটে অবশ্য জর্ডানসহ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের সরকার এবং মিশর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছে। আরব দেশগুলোকে মানবিক সংকটের বিষয়ে একজোটও মনে হচ্ছে। কিন্তু সরাসরি শত্রুতা বা যুদ্ধে গড়ানোর পর্যায়েও কেউ যেতে চায় না।

এছাড়া, শরণার্থী সমস্যা জর্ডানের জন্যও একটি বড় ইস্যু। ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা যেসব দেশে আশ্রয় নেন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জর্ডান। সেখানে নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা ২০ লাখের ওপর। এ হিসাব ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ’র।এর বাইরে দেশটিতে সাড়ে সাত লাখের বেশি শরণার্থী রয়েছে, যার সিংহভাগ এসেছে সিরিয়া থেকে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের ক্ষত এখনো পুরো অঞ্চলের শরণার্থীরা বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই গাজার মানুষকে গাজার ভেতরেই সুরক্ষা দিতে হবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কালের আলো/এসএমআর