সালমান-উজরা বৈঠকে বিএনপি’র স্বপ্নভঙ্গ
প্রকাশিতঃ 9:50 pm | October 28, 2023
কালের আলো রিপোর্ট :
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন রীতিমতো বিএনপি’র উপদেষ্টায় রূপ নিয়েছেন ঠিক সেই সময়ে দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে। উচ্ছ্বসিত উজরা নিজেই টুইট বার্তায় বৈঠকের তথ্যও জানিয়েছেন। স্থানীয় মার্কিন দূতাবাসের জোরে যখন বিএনপি এক দফা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত মরণকামড় দিচ্ছে, সহিংস কায়দায় পুলিশ হত্যা করছে ওই সময় উজরার এই বারতায় বিএনপি নেতারা বিস্ময়ে হতবাক। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কর্মীরাও ফখরুল, আমির খসরুদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ। কূটনীতিতে দলের ‘ধরা’ খাওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই মানতে পারছেন না তারা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিষয়টিকে মার্কিনিদের দ্বৈত অবস্থান বলে মতামত দিয়েছেন। তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে বলছেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বিএনপির ব্যাপারে সহানুভূতিশীল কিন্তু ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তর আওয়ামী লীগের ব্যাপারে উদার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময় সালমান এফ রহমানের সাথে উজরা জেয়ার বৈঠক নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে মার্কিন নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে এবং উজরা জেয়ার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিতে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে এবং এ নিয়ে এক ধরনের গোপনীয়তাও রক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন সফরের সময় যে জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকের কথাটি প্রকাশ করা হয়নি। কৌশলগত কারণে এটি প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আপোষ হয়ে গেছে বলে বক্তব্য রাখলেন ঠিক সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তিনি জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকের কথাটি প্রথম প্রকাশ করেন। তবে এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার উজরা জেয়া নিজেই টুইট বার্তার মাধ্যমে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকের তথ্য জানিয়েছেন।
সাধারণত কূটনীতিক পরিভাষায় বলা হয় যে ইতিবাচক বা ফলপ্রসূ বৈঠক হলেই এধরনের টুইট বার্তা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সরকার সমঝোতায় আসার নানামুখী চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে তারা অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে। বিশেষ করে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা যেন অবাধে এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে প্রচারণা করতে পারে, নির্বাচনে কোনো রকম পক্ষপাত করা হবে না। সর্বোপরি ভোটার অংশগ্রহণ ভালো হবে। এই বার্তাটি নিয়েই সালমান এফ রহমান গিয়েছিলেন। আর নির্বাচনের মাত্র তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে সঙ্গে সালমানের সঙ্গে উজরা জেয়ার এই বৈঠক নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাঁরা বলছেন, মার্কিন দূতাবাস যেভাবে বিএনপির সমাবেশের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ছুটে গেছেন বা যে ধরনের মনোভাব দেখাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইকমান্ড পুরোদমে বিপীত। তাঁরা বেশ নমনীয় মানসিকতারই বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। বিএনপি’র তরফ থেকে নানাভাবে বলা হয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেবে, বাংলাদেশের কতিপয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি।
অনেকে মনে করছে বাংলাদেশ যে নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নীরব সমঝোতার চেষ্টা করছে তার ফলেই যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেকটাই নমনীয় হয়েছে। এর ফলে বিএনপি হোচঁট খেয়েছে। কারণ তাদের আন্দোলন পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’র ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণযোগ্যতা দেবে না, নানারকম নিষেধাজ্ঞা দেবে, সরকার চাপে পড়বে এমন একটি অবস্থান থেকেই বিএনপি এক দফা দাবিতে মহাযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু উজরা জেয়ার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের বৈঠকের টুইট পুরোদমে দলটির মাথায় হাত পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কালের আলো/ওয়াইএ/এমকে