র‌্যাব পরিচয়ে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন, অত:পর..

প্রকাশিতঃ 6:38 pm | November 02, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

র‍্যাব পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে চলতি পথে মুক্তাগাছার নিমুরিয়া এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থামিয়ে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে তুলে নেওয়া হয় আসাদুজ্জামানকে। তিনি বাংলালিংক সীম কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। নিজের অফিসের কাজে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার পথে র‌্যাব পরিচয়ে মাদক আছে বলে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। চক্রের দুই সদস্য আসাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়। পরে আসাদের স্ত্রীর কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। গাড়িতে তুলে অস্ত্রের মুখে অমানবিক নির্যাতন চলাতে থাকে আসাদের ওপর।

শুধু এই একটি ঘটনা-ই নয়, র‌্যাব-ডিবিসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে রাস্তা থেকে মানুষ তুলে নিয়ে অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪’র একটি দল। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত তিন ভুক্তভোগীকে।

বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর)  দুপুরে র‌্যাব-১৪ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চক্রটির এমন অপতৎপরতা বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

এর আগে বুধবাব (০১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে তাদেরতে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা হলেন- র‌্যাব প্রধান পরিচয় দেওয়া মাহবুব আলম রাসেল (৪৩), মনির হোসেন (৪০), মো. মুছা শেখ (২৪) ও সবুজ বিশ্বাস (২৪)। এর মধ্যে রাসেলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের আমিনপুর গ্রামে, মনিরের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে, মুছার বাড়ি সিরাজগঞ্জে এবং সবুজের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। তাদের কাছ থেকে আসল র‌্যাব উদ্ধার করে ৫ রাউন্ড গুলি সহ একটি বিদেশি পিস্তল, র‌্যাবের দুইটি ভুয়া আইডি কার্ড, ডিজিএফআই এর ভুয়া আইডি কার্ড,  ৫টি বাটন মোবাইল ফোন, একটি সাদা রংয়ের হায়েস মাইক্রো, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রোড পারমিট সার্টিফিকেট, ফিটনেস সনদপত্র, একটি চাবি ও ছিনতাইকৃত ৬৬ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, চক্রটি তাদের তৎপরতা শুরু করে টাঙ্গাইল থেকে। জেলার ভুঞাপুর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ত্রিশাল এলাকায় তিনটি অপহরণের ঘটনা ঘটায়। শুরুতে বুধবার সকালে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর গোবিন্দাস বাজারের মাংস ব্যবসায়ী রফিকুল তালুকদারকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। চোরাই গরু কেনার অপরাধে তাকে ধরা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের জানিয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে চোখ-মুখ বেঁধে পেটানো শুরু করে। গাড়ি তোলার আগে দোকান থেকে ৪০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয় চক্রটি। পরে রফিকের স্ত্রীর কাছে র‌্যাবের মেজর পরিচয়ে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে এবং গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

এছাড়া চক্রটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের বাগান রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় মুদি দোকানের কর্মচারী মো. হাফিজুল ইসলামকে তুলে নেয়। সে দোকানে কাজ করার পাশাপাশি ভ্যান চালায়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাফিজুলকে নিজেদের গাড়ির কাছে ডেকে নেয় চক্রটির সদস্যরা। পরে র‌্যাব পরিচয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে পেটাতে থাকে। ওই সময় হাফিজুলের সঙ্গে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা।

এদিকে বাংলালিংক কোম্পানীর প্রতিনিধিকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার খবরে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ র‌্যাব-১৪ কার্যালয়কে জানায়। খবর পেয়ে র‌্যাবের একাধিক টিম চক্রটিকে ধরতে মাঠে নামে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকা থেকে চক্রটির প্রধানসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১৪’র অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে অপহরণের কাজ করছিল চক্রটি। চক্রের সঙ্গে অন্য যারা জড়িত আছে তাদের শনাক্তে কাজ চলছে। আসল র‌্যাব কখনও পোশাক ছাড়া কিংবা পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো অভিযানে যায় না। অভিযানে ১০ জনের নিচে সদস্য থাকে না। এ ধরণের তৎপরতা রোধে র‌্যাব মাঠে কাজ করছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। কাউকে সন্দেহ বলে দ্রুত জাতীয় জরুরি সেবা ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুমে জানাতে হবে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

কালের আলো/বিএস/এমএইচ