প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধানের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগের অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 8:40 pm | November 10, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

২০২১ সালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের প্যারেডের অগ্রভাগে ছিল একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, বিভিন্ন কবির অসংখ্য কবিতার পঙতিতে উঠে আসা সেই ধন্য পুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশালাকৃতির ভাস্কর্য। নজরকাড়া ও প্রশংসিত সেই ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্থায়ীভাবে রাজধানীর বিজয় সরণীতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে’ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সম্বলিত মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের মতো অতি সম্মানজনক কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এদিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নিজের বক্তব্যে সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠা এই সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আত্মনিয়োগে সর্বদা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট থাকব।’

প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি শুরুতে আমি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করছি যার অশেষ রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুস্থ হয়ে আজকে আমাদের এই অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও স্বশরীরে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ
প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে পেয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনাকে আজ আমাদের মাঝে পেয়ে সত্যিই আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের যে আজকের উন্নয়ন এবং বিশ্ব দরবারে আমাদের যে সম্মান অর্জিত হয়েছে তা কখনোই সম্ভব হতো না যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। তাই আজকের এই অনুষ্ঠানের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মূল রূপকার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি আরও শ্রদ্ধা জানাতে চাই বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই, সেনাবাহিনীর সকল শহীদদের যারা স্বাধীনতা যুদ্ধেই শুধু নয় তার পরবর্তী সময়ে দেশের স্বার্থে দেশে এবং বিদেশের মাটিতে দায়িত্বরত অবস্থায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা।’

মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণটি সকলকে মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে
এই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর যে ভাস্কর্যটি আপনারা দেখতে পারছেন সেটি ২০২১ এবং ২০২২ সালে বিজয় দিবস প্যারেডে প্রদর্শিত হবার পর সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয় বলে জানান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথাযোগ্য স্থানে ভাস্কর্যটি স্থায়ীভাবে প্রদর্শনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বেশ কয়েকটি স্থান নির্বাচন করি এবং তার মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই স্থানটিকে নির্বাচন করেন এবং এখানে এটা স্থাপন করার উপদেশ প্রদান করেন। আমি আশা করি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সমন্বয়ে নির্মিত এই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণটি সকলকে মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে এবং নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দেবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দূরদৃষ্টি সম্পূর্ণ নির্দেশনার কারণে বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যটি যথাযোগ্য স্থানে স্থাপিত হয়েছে। এজন্য আমাদের সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমি আরও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এই শিল্পকর্মটি নির্মাণের সাথে জড়িত সকল শিল্পী, প্রকৌশলী, শ্রমিক এবং তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চিফ অফ জেনারেল স্টাফ, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লজিস্টিক এরিয়া, স্টেশন কমান্ডোর ঢাকাসহ সকলকে তাদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের কারণে এটি সময়মতো শুধু শেষ হয়েছে না অনেক অল্প খরচেও আমরা এটি করতে পেরেছি।’

বাংলাদেশ পুলিশ ও ডিএনসিসিকে ধন্যবাদ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাদেশ পুলিশকে, যারা প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের পাশে ফুটপাত ও পুলিশ বক্স নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। সবশেষে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের এই অভ্যাগত অতিথিবৃন্দকে যারা শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন।’

স্মরণীয় হয়ে থাকবে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ উদ্বোধন
‘আজকের এই অনুষ্ঠানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উপস্থিতি ও মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের উদ্বোধন আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের মতো অতি সম্মানজনক কাজে আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাকে সেনাবাহিনী সকলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের সেনাবাহিনী সকল প্রকার গৌরবময় কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখবে’- বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও লজিটিক্স এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো.মঈন খানসহ সামরিক-বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। পরে তিনি উপস্থিত স্কুল শিক্ষার্থী এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।

কালের আলো/এমএএএমকে